ত্বকের যত্নে প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করি। কিছু ক্ষেত্রে আমরা ক্রিম ব্যবহার করি আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিভিন্ন সিরাম ব্যবহার করি। তাছাড়াও প্রত্যেকদিন আমরা পানি দিয়ে আমাদের মুখ পরিষ্কার করি। প্রত্যহ পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার না করলে তৈলাক্ততা, ত্বকের শুষ্কভাব, ত্বকের অনুজ্জ্বলতা, ব্রণসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই ত্বকের সুস্থতা ও উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য প্রতিনিয়ত পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা উচিত।
এখন প্রশ্ন এসে যায় যে ত্বকের উজ্জ্বলতা কোমলতা ও তৈলাক্ত ভাব দূর করতে দিনে কতবার মুখ ধোয়া উচিত? আর যদি পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হয় তবে তা গরম পানি নাকি ঠান্ডা পানি? মূলত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় যা করার সময় বেশিরভাগ মানুষই ভুল করে থাকেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো গরম পানি মুখে দিলে আদৌ কোন সমস্যা হয় কিনা এবং দিনে কতবার মুখ ধোয়া উচিত। তার আগে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন পরিস্থিতিতে কোন তাপমাত্রার পানি মুখের ত্বক পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতে হবে।
গরম পানি দিয়ে মুখ ধুলে কি কি ক্ষতি হতে পারে?
প্রথমত বলে রাখা ভালো যে মানুষের মুখের ত্বক অন্যান্য ত্বকের চেয়ে কোমল ও অধিক সংবেদনশীল। তাই মুখের ত্বকের যত্নের ব্যাপারে খুবই সতর্ক হতে হবে। অতিরিক্ত গরম পানি মুখের চামড়াকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে যা ত্বকের স্থায়ী দাগের সৃষ্টি করবে। এছাড়াও প্রত্যহ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের উজ্জ্বলতা হ্রাস পায় এবং ত্বক বিবর্ণ হয়ে পড়ে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকেই মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে যদি পানি তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় তবে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়। আপনি যদি সত্যিই ত্বকের লাবণ্য এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার জন্য গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে চান তাহলে আপনি স্টিম থেরাপি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
গরমকালে কোন তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত?
বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গরমকালে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। ইদানীং দেশের তাপমাত্রা যেহেতু ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরে থাকছে তাই গরমকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। মুগ্ধ হওয়ার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি যেন না হয়। তবে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বা কক্ষ তাপমাত্রায় পানি সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে গণ্য হয়।
তাই মুখ ধোয়ার সময় সরাসরি ট্যাপের পানি পরিহার করা উচিত। কারণ গরমকালে ট্যাপের পানির তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া পেটের পানিতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, জীবাণুসহ বিভিন্ন আণুবীক্ষণিক ময়লা থাকে যা আপনার ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই গরমকালে মুখ ধোয়ার জন্য ফিল্টারের পানি ব্যবহার করা উচিত। এবং খেয়াল রাখতে হবে তাপমাত্রা যেন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়।
গ্রীষ্মকালে গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত কিনা?
গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা হলো স্টিম থেরাপি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে এই পদ্ধতিতে পানির তাপমাত্রা খুব বেশি হয় না। মোটামুটি ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানিকে কুসুম কুসুম গরম করে তার ভাপ মুখে নিলে ত্বকের উপকার হয়। সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায় ত্বক কঠিন ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। যার ফলে তোকে তেলের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কালো কালো ছোপ দেখা যায়। এক্ষেত্রে নিম পাতার স্টিম থেরাপি হতে পারে একটি আদর্শ সমাধান।
প্রাকৃতিকভাবেই নিমগাছকে হাজার রোগের ওষুধের গাছ বলে অভিহিত করা হয়। বিশেষ করে যাদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিনিয়তই নিম পাতার স্টিম থেরাপি নিয়ে থাকেন। এক লিটার পানিতে ৫ থেকে ১০ গ্রাম নিমপাতা সিদ্ধ করে তার তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিয়ে আসার পর সেই পানির ধোঁয়া মুখে দেওয়া যায়। তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসলে ওই পানি দিয়ে মুখ ধোয়া যায়।
স্টিম থেরাপি অনুসরণ পদ্ধতি
প্রথমে গরম পানিতে নিম পাতা সিদ্ধ করে তার সহনীয় ভাপ কিছু সময় মুখে ধরলে ত্বকের তেল ভাব ও ময়লা নরম হয়। তারপর সহনীয় পর্যায়ে কুসুম কুসুম গরম নিম পাতার পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে। এ সময় ত্বককে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার পর আবার নিম পাতার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিশেষে নরম তোয়ালে দিয়ে মুখের পানি মুছতে হবে।
স্টিম থেরাপির সুফল ও কুফল
প্রথমত আসা যাক স্টিম থেরাপির সুফল সম্পর্কে। এটি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক চিকিৎসা যা আপনার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি আপনার ত্বকের সমস্ত ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে এবং ত্বককে করে আর্দ্র ও উজ্জ্বল। এছাড়াও এটি ত্বকের কোলাজের উৎপাদন হওয়ার বাড়িয়ে দেয় যা ব্রণের কারণে সৃষ্ট গর্ত পূরণে সহায়তা করে।

তবে প্রতিনিয়ত অত্যধিক হারে স্টিম থেরাপি ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে লোমের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে যা সেবাম উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করবে। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে এটি ত্বকের তেল দূর করে ত্বককে অধিক মাত্রায় শুষ্ক করে ফেলতে পারে। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন অন্তত এক দুই দিন পরপর দিনে একবার স্টিম থেরাপি নেয়ার।
শীতকালে কোন তাপমাত্রায় পানি দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত?
শীতকালে ত্বক খুবই শুষ্ক থাকে। অর্থাৎ, ত্বক সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে হয়। অধিক গরম পানি যেমন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, অতি ঠান্ডা পানিও একইভাবে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। ঠান্ডা আবহাওয়ায় ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। পানির তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে তা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। এই আবহাওয়ায় মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই ভেসলিন ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় ত্বকের কোষগুলো মরে যাবে এবং ত্বক রুক্ষ ও সুস্থ হয়ে পড়বে।
দিনে কতবার মুখ ধোয়া উচিত?
পরিষ্কার থাকার আসলে কোনো সীমা নেই। কেউ চাইলে দিনে একবার মুখ ধুতে পারে আবার কেউ চাইলে দিনে প্রত্যেকবার বাইরে থেকে আসার পর মুখ ধুয়ে ফেলেন। তবে প্রত্যেকবার ঘর থেকে বের হওয়ার পর ঘরে এসে প্রথমেই সহনীয় তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা উচিত।
বাইরে বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর পাশাপাশি ধুলাবালির কণা উড়ে বেড়ায়। এগুলো ত্বকের উপর ময়লা আস্তরণ সৃষ্টি করে লোমকূপ গুলোকে বন্ধ করে ফেলে। তাই বাসায় এসে পানি দিয়ে মুখ ধুলে ময়লা দূর হয় এবং ত্বক সুস্থ থাকে। সুস্থ ত্বকের অধিকারী হওয়ার জন্য দিনে অন্তত ৫ থেকে ৬ বার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত। তবে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে যেন পানির তাপমাত্রা আপনার ত্বকের জন্য সহনীয় হয়।
উপসংহার
তীব্র তাপদাহ কিংবা খুবই ঠান্ডা আবহাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই প্রত্যহ পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা উচিত। অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করলে যেমন ত্বক পুড়ে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে ঠিক তেমনি খুবই ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে ত্বকের কোষগুলো মরে যেতে পারে। তাই প্রতি ছয় মাস অন্তর একজন অভিজ্ঞ ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে ত্বক পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়া বাসায় বসে স্টিম থেরাপি অনুসরণ করেও ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখা যায়। সুস্থ ত্বকের অধিকারী হওয়ার জন্য দিনে অন্তত ৫ বার সঠিকভাবে পানি দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত।