You are currently viewing ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে এবং ঠোঁট ফাটা দূর করার উপায়?
ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে

ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে এবং ঠোঁট ফাটা দূর করার উপায়?

ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা, যা প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে সম্মুখীন হয়। ঠোঁটের ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশগুলির মধ্যে একটি, যা সহজেই শুষ্কতা এবং পরিবেশগত প্রভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শীতকালে শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রভাব, সূর্যের অতিরিক্ত তাপ, ধুলোবালি, এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব সবকিছুই ঠোঁট ফাটার জন্য দায়ী হতে পারে।

তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে। আর যে কারণে এর সঠিক পরিচর্যাও নিতে ভুল করে বসেন তারা। ঠোঁট ফাটা শুধু চেহারার সৌন্দর্য কমায় না, বরং এটি মাঝে মাঝে ব্যথা, অস্বস্তি এবং রক্তপাতের কারণও হতে পারে। তাই ঠোঁট ফাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং ঠোঁটকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সঠিক যত্ন ও পুষ্টি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিস্তারিত জানতে আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন। 

ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে?

ঠোঁট ফাটা দূর করার উপায় কি

ঠোঁট ফাটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তার মধ্যে ভিটামিনের অভাব একটি প্রধান কারণ। শরীরের সঠিক পুষ্টি সরবরাহ না হলে ত্বকের নরম অংশ যেমন ঠোঁট, সহজেই শুষ্ক ও ফাটা শুরু করে। কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিনের অভাব ঠোঁট ফাটার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। নিচে সেই ভিটামিনগুলোর অভাবের কারণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) এর অভাব:

ভিটামিন বি২, যা রাইবোফ্লাভিন নামে পরিচিত, ঠোঁটের ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিনটি শরীরে শক্তি উৎপাদন এবং ত্বকের কোষের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। রাইবোফ্লাভিনের অভাবে ঠোঁট ফেটে যায়, এবং কোণার অংশে ক্ষত হতে পারে, যা অ্যাঙ্গুলার চেইলাইটিস নামে পরিচিত। এর ফলে ঠোঁটে জ্বালা, ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। তাছাড়া, এই ভিটামিনের ঘাটতি ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে, যেমন- ফাটা ত্বক, লালচে ও শুষ্ক ত্বক ইত্যাদি।

ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) এর অভাব:

ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন শরীরে ডিএনএ মেরামত, কোষের শক্তি উৎপাদন এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভিটামিনের অভাব পেলের্গ্রা নামে একটি রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বক শুষ্ক ও ফাটা হয়ে যায়, বিশেষ করে ঠোঁটের ত্বক। পেলের্গ্রার কারণে ঠোঁট ফাটা, লালচে দাগ এবং প্রদাহ হতে পারে। এছাড়া নিয়াসিনের ঘাটতির ফলে ত্বকে চুলকানি এবং ত্বকের শুষ্কতা বাড়তে পারে, যা ঠোঁট ফাটার সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে।

ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) এর অভাব:

ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন প্রোটিন, ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভিটামিনের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। ভিটামিন বি৬-এর ঘাটতি ত্বকের প্রদাহ, ফাটা ঠোঁট, এবং ঠোঁটের কোণায় চুলকানি ও লালচে দাগ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, এই ভিটামিন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক, যা ঠোঁট ফাটার সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে।

ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন) এর অভাব:

ভিটামিন বি১২, যা কোবলামিন নামে পরিচিত, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। এর অভাব ঠোঁট ফাটার পাশাপাশি অন্যান্য ত্বকের সমস্যারও কারণ হতে পারে। ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে এবং ঠোঁটের ত্বক ফেটে যেতে পারে। এছাড়া, এই ভিটামিনের অভাবে মিউকোসাইটিস নামক রোগ হতে পারে, যা ঠোঁটের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।

ভিটামিন ই এর অভাব:

ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং ঠোঁটের ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই-এর অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। এটি ত্বকের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখে। ভিটামিন ই-এর অভাব ঠোঁটের শুষ্কতা ও ফাটার অন্যতম কারণ হতে পারে।

ভিটামিন এ এর অভাব:

ভিটামিন এ ত্বকের পুনর্গঠন ও আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিনের অভাবে ঠোঁটের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফাটা শুরু করে। ভিটামিন এ-এর অভাব ত্বকের শুষ্কতা, প্রদাহ, এবং ঠোঁটের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।

ঠোঁট ফাটা দূর করার উপায় কি?

ফাটা ঠোঁট ময়েশ্চারাইজ করার উপায় কি

ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে। ঠোঁটের ত্বক খুবই সংবেদনশীল এবং এতে শুষ্কতা, জ্বালা, ব্যথা বা রক্তপাত হতে পারে। ঠোঁট ফাটার সমস্যাকে দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় আছে যা ঠোঁটকে মসৃণ, নরম এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। নিচে ঠোঁট ফাটা দূর করার বিস্তারিত কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান:

ঠোঁট ফাটার একটি প্রধান কারণ হলো শরীরে পানির অভাব। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা যায়, যা ঠোঁটের শুষ্কতা কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।

লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার:

ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধে নিয়মিত লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ঠোঁটের ত্বক নরম থাকে এবং শুষ্কতা থেকে রক্ষা পায়। লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার বেছে নেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন যে, এতে ভিটামিন ই, শিয়া বাটার, মধু, মোম বা এলোভেরা আছে কি না। এগুলো ঠোঁটকে প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে মেরামত করে।

শীতে ঠোঁটের যত্ন, ঠোঁট গোলাপি করার উপায়

প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার:

প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল তেল, বাদাম তেল, জোজোবা তেল বা অলিভ অয়েল ঠোঁট ফাটা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। এগুলোতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঠোঁটের ত্বককে আর্দ্রতা যোগায় এবং শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে। ঘুমানোর আগে ঠোঁটে একটু তেল ম্যাসাজ করে নিলে তা সারা রাত ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করে।

ঠোঁট চাটা বা কামড়ানো এড়িয়ে চলা:

অনেকেই ঠোঁট শুকিয়ে গেলে সেটি চেটে নেন, যা ঠোঁটকে আরও শুষ্ক করে তোলে। লালা শুকিয়ে গেলে ঠোঁটের ত্বক আরও বেশি ফেটে যেতে পারে। তাই ঠোঁট চাটা বা কামড়ানোর বদলে লিপ বাম ব্যবহার করুন।

ভিটামিনের সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করা:

ভিটামিনের অভাব ঠোঁট ফাটার অন্যতম কারণ। তাই ভিটামিন বি২, বি৩, বি৬, বি১২, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এই ভিটামিনগুলো ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ঠোঁটকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়া, প্রয়োজনে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করা যেতে পারে।

সবশেষে, ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ ধূমপান ঠোঁটের ত্বককে শুষ্ক ও অরক্ষিত করে। নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করে ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ রাখা সম্ভব, যা ঠোঁট ফাটার সমস্যা দূর করতে সহায়ক।

ফাটা ঠোঁট ময়েশ্চারাইজ করার উপায় কি?

ফাটা ঠোঁট ময়েশ্চারাইজ করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় আছে যা ঠোঁটকে নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। প্রথমেই, একটি হাইড্রেটিং লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, যা শিয়া বাটার, মধু, ভিটামিন ই, বা এলোভেরা সমৃদ্ধ। এসব উপাদান ঠোঁটের ত্বককে গভীরভাবে আর্দ্রতা প্রদান করে এবং শুষ্কতা কমায়। লিপ বামের পরিবর্তে প্রাকৃতিক তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন নারকেল তেল, বাদাম তেল, জোজোবা তেল বা অলিভ অয়েল। 

এই তেলগুলো ঠোঁটের ত্বকে একটি প্রাকৃতিক আর্দ্রতার স্তর তৈরি করে, যা ঠোঁটকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে এবং ফাটল সারাতে সাহায্য করে। এছাড়া, ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা বজায় থাকলে ঠোঁটও স্বাভাবিকভাবে আর্দ্র থাকে এবং ফাটার প্রবণতা কমে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

উপসংহার

ঠোঁট ফাটা একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে, এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ঠোঁটকে শুষ্কতা ও ফাটার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। আমরা এখন জানি, ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে। ভিটামিনের অভাব পূরণ করার পাশাপাশি, ঠোঁটের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হবে, যেমন প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করা, ঠোঁটের সঠিক ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা, এবং শীতের সময়ে ঠোঁটকে ঢেকে রাখা। নিয়মিত যত্ন ও সচেতনতা বজায় রেখে আমরা ঠোঁটকে স্বাস্থ্যকর রাখতে পারি।

Leave a Reply