You are currently viewing ঘরের ভিতরে কি গাছ রাখা যায় এবং পানি সহনীয় গাছ কি কি?
ঘরের ভিতরে কি গাছ রাখা যায়

ঘরের ভিতরে কি গাছ রাখা যায় এবং পানি সহনীয় গাছ কি কি?

আধুনিক জীবনযাত্রায় প্রকৃতির সান্নিধ্য ক্রমশই দুর্লভ হয়ে উঠছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সহজ ও কার্যকরী সমাধান হলো ঘরের ভিতরে গাছ রাখা। ইনডোর প্ল্যান্ট শুধু আমাদের ঘরের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, এগুলি আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, ঘরের ভিতরে কি গাছ রাখা যায়? রাখা গেলেও কোন ধরনের গাছ ঘরের অন্দরমহলে বেঁচে থাকতে পারে? 

ছায়ায় কোন গাছগুলি ভালো বাড়ে? আর যদি আমরা ভুলে যাই গাছে পানি দিতে, তাহলে কোন গাছগুলি সেই অবহেলা সহ্য করতে পারে? এই আর্টিকেলে আমরা এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজব। আমরা আলোচনা করব বিভিন্ন ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট সম্পর্কে, যেগুলি সহজেই ঘরের ভিতরে লালন-পালন করা যায়। আমরা জানব কোন গাছগুলি কম আলোতেও বেঁচে থাকতে পারে, যেগুলি আমাদের ব্যস্ত জীবনে মাঝেমধ্যে পানি দেওয়া ভুলে গেলেও মারা যায় না।

ঘরের ভিতরে কি গাছ রাখা যায়?

ঘরের ভেতরে এবং ছায়ায় ভালোভাবে বেড়ে ওঠা গাছপালা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং একই সাথে বাতাসের মান উন্নত করে। ইনডোর প্ল্যান্টস হিসেবে পরিচিত এসব গাছ অল্প আলো ও যত্নে বেড়ে উঠতে পারে, তাই এগুলো ছায়া ও কম আলোয় ভালোভাবে টিকে থাকে। নিচে ঘরের ভেতরে এবং ছায়ায় হয় এমন গাছ এর কিছু প্রকার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

ঘরের ভিতরে কি গাছ

স্নেক প্ল্যান্ট (Sansevieria)

স্নেক প্ল্যান্টের পাতাগুলো লম্বা, খাড়া এবং মসৃণ, যা ঘরের ভেতরে একটি আধুনিক লুক নিয়ে আসে। এর পাতাগুলো সবুজ রঙের এবং কিছু প্রজাতির পাতায় হলুদ বা সাদা রেখাও দেখা যায়।

যত্ন: এটি খুবই কম আলো এবং কম পানিতে টিকে থাকে। সপ্তাহে একবার পানি দিলেই যথেষ্ট।

উপকারিতা: স্নেক প্ল্যান্ট বাতাস থেকে বিষাক্ত পদার্থ যেমন ফরমালডিহাইড এবং বেনজিন শোষণ করে, যা ঘরের বায়ু মান উন্নত করে।

স্পাইডার প্ল্যান্ট (Chlorophytum comosum)

স্পাইডার প্ল্যান্টের পাতাগুলো সরু, সবুজ এবং সাদা দাগযুক্ত হয়, যা ঘরের বিভিন্ন কোণে দারুণভাবে মানিয়ে যায়। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ছোট ছোট মাচার মতো ঝুলন্ত শাখা তৈরি করে।

হাতের তৈরি ঘর সাজানোর জিনিস ও কিছু দারুণ আইডিয়া

যত্ন: হালকা ছায়া ও পরোক্ষ আলোতে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হয়।

উপকারিতা: স্পাইডার প্ল্যান্ট বাতাস থেকে কার্বন মনোক্সাইড এবং ফরমালডিহাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে।

পিস লিলি (Spathiphyllum)

পিস লিলির গাছে উজ্জ্বল সবুজ পাতা এবং সাদা ফুল ফোটে, যা দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। এটি কম আলোতেও ফুল ফোটাতে সক্ষম।

যত্ন: আর্দ্র মাটি এবং মাঝে মাঝে পানি দেওয়া পছন্দ করে। পরোক্ষ আলোতে ভাল বাড়ে।

উপকারিতা: এটি বায়ু পরিশোধনের জন্য বিখ্যাত, বিশেষত ফরমালডিহাইড, বেনজিন, এবং কার্বন মনোক্সাইড শোষণে কার্যকর।

জাম্বু (Zamioculcas zamiifolia)

জাম্বু গাছের পাতা মসৃণ, চকচকে এবং গাঢ় সবুজ রঙের। এটি খুবই ধৈর্যশীল এবং কম যত্নে বেড়ে উঠতে পারে।

যত্ন: কম আলো এবং ছায়ায় ভালভাবে বেঁচে থাকে। পানি দেওয়ার সময় মাটি শুকিয়ে গেলে দিতে হয়।

উপকারিতা: জাম্বু গাছ অল্প আলোতে বেড়ে ওঠে এবং ঘরের বায়ু থেকে টক্সিন দূর করে।

অ্যালো ভেরা (Aloe vera)

অ্যালো ভেরার পাতা মোটা, মাংসল, এবং ধূসর-সবুজ রঙের। এটি ঔষধি গুণের জন্য বিখ্যাত এবং ঘরের বিভিন্ন অংশে সহজেই মানিয়ে যায়।

যত্ন: সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে ছায়াময় জায়গায় রাখা ভালো। পানি দেওয়ার সময় মাটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পরে দিতে হয়।

উপকারিতা: অ্যালো ভেরা বায়ু পরিশোধন করে এবং পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা যায়।

রাবার প্ল্যান্ট (Ficus elastica)

রাবার প্ল্যান্টের পাতাগুলো গাঢ় সবুজ এবং চামড়ার মতো মসৃণ। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বড় গাছের মতো আকার ধারণ করতে পারে।

যত্ন: মৃদু আলো এবং ছায়ায় ভালোভাবে জন্মে। পানি দেওয়ার সময় মাটি আর্দ্র রাখার চেষ্টা করতে হবে।

উপকারিতা: এটি ঘরের বাতাস থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

বস্টন ফার্ন (Nephrolepis exaltata)

বস্টন ফার্নের পাতাগুলো দীর্ঘ এবং সরু, যা ঝুলন্ত গাছ হিসেবে আদর্শ। এটি ঘরের বিভিন্ন অংশে ঝুলিয়ে রাখা যেতে পারে।

যত্ন: ছায়ায় ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং আর্দ্র মাটি পছন্দ করে। নিয়মিত পানি দিতে হবে।

উপকারিতা: বস্টন ফার্ন বাতাসের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ফর্মালডিহাইড শোষণে কার্যকর।

অর্কিড (Orchid)

অর্কিড একটি সুন্দর ফুলের গাছ, যা বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটায়। এটি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং অন্যান্য গাছপালার মধ্যে ভিন্নতা আনে।

যত্ন: ছায়াময় পরিবেশ এবং পরোক্ষ আলোতে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। পানি দেওয়ার সময় মাটি হালকা আর্দ্র রাখা উচিত।

উপকারিতা: অর্কিড ঘরের বাতাস পরিশোধন করে এবং ঘরে একটি মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে।

মোনস্টেরা (Monstera deliciosa)

মোনস্টেরা গাছের পাতাগুলো বড় এবং ছিদ্রযুক্ত, যা ঘরে একটি উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করে। এটি ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

যত্ন: পরোক্ষ আলো এবং ছায়ায় ভালোভাবে বাড়ে। মাটি আর্দ্র রাখা এবং মাঝে মাঝে পানি দেওয়া উচিত।

উপকারিতা: মোনস্টেরা বায়ু পরিশোধন করে এবং ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে।

এই গাছপালাগুলো ঘরের ভেতরে ছায়া ও কম আলোতেও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং ঘরের পরিবেশকে শীতল ও সতেজ রাখে। এগুলো শুধু সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

পানি সহনীয় গাছ কি কি?

পানি সহনীয় গাছ কি কি

পানি সহনীয় গাছ হলো এমন গাছ, যেগুলো খুব কম পানি দিয়েও ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। এ ধরনের গাছগুলো শুষ্ক পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। পানি সহনীয় গাছগুলো এমন গাছ, যেগুলো খুব কম পানি দিয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম এবং শুষ্ক আবহাওয়াতেও ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। 

এ ধরনের গাছগুলোর মধ্যে সাকুলেন্টস অন্যতম, যা পাতা, কান্ড, কিংবা শেকড়ে পানি সংরক্ষণ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে এলো ভেরা এবং জেড প্ল্যান্ট উল্লেখযোগ্য। এই গাছগুলো খুব কম যত্নে এবং কম পানিতেও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে, যা ব্যস্ত জীবনের জন্য উপযোগী। এছাড়াও, ক্যাকটাস গাছগুলোও শুষ্ক পরিবেশের জন্য আদর্শ। এরা শুষ্ক মরুভূমির গাছ হিসেবে পরিচিত এবং শুষ্ক অবস্থায়ও টিকে থাকতে পারে।

ঘর সাজাতে কি কি লাগে এবং আধুনিক ঘর সাজানোর উপায়

কম পানি সহ্য করতে সক্ষম গাছগুলোর মধ্যে স্নেক প্ল্যান্ট এবং রাবার প্ল্যান্ট বেশ জনপ্রিয়। স্নেক প্ল্যান্ট খুব কম পানিতেই বেড়ে ওঠে এবং শুষ্ক পরিবেশেও টিকে থাকে। এটি ঘরের ভেতরেও রাখা যায়, যেখানে কম আলো এবং কম পানি প্রয়োজন। রাবার প্ল্যান্টও কম পানি সহ্য করতে পারে এবং এটি মাঝেমধ্যে পানি দিলেই ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। এই গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সহজ এবং এগুলো ঘরের সজ্জায় একটি প্রাকৃতিক এবং শীতল পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে।

পথোস এবং জাম্বু (ZZ প্ল্যান্ট) আরও দুটি জনপ্রিয় ইনডোর গাছ, যেগুলো কম পানিতেও ভালোভাবে টিকে থাকে। পথোস গাছ কম পানি এবং আলোতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এর দীর্ঘ সবুজ পাতাগুলো ঘরের শোভা বাড়ায়। জাম্বু গাছও খুব কম পানিতে টিকে থাকতে পারে এবং এটি শুষ্ক মাটি পছন্দ করে। এ ধরনের গাছগুলো খুবই সহনশীল এবং কম রক্ষণাবেক্ষণে তাজা থাকে, যা ব্যস্ত জীবনযাপনের জন্য আদর্শ।

উপসংহার

ঘরের ভিতরে গাছ রাখা শুধু একটি সাজসজ্জার উপাদান নয়, এটি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের একটি সহজ ও কার্যকর উপায়। আমরা দেখলাম, ঘরের ভিতরে কি গাছ রাখা যায় এবং যা ঘরের ভিতরে সহজেই বেঁচে থাকতে ও বাড়তে পারে। ছায়াপ্রিয় গাছগুলি আমাদের ঘরের সেই কোণগুলিকেও সজীব করে তুলতে পারে যেখানে প্রচুর আলো পৌঁছায় না। 

আবার, পানি সহনশীল গাছগুলি আমাদের ব্যস্ত জীবনে একটু অবহেলা করলেও ক্ষমা করে দেয়। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি গাছেরই নিজস্ব চাহিদা রয়েছে। তাই গাছ বেছে নেওয়ার সময় আপনার জীবনশৈলী, সময় ও পরিশ্রম দেওয়ার ক্ষমতা বিবেচনা করুন।

Leave a Reply