You are currently viewing কোন সময় ব্যায়াম করা ভালো – জেনে নিন ব্যায়ামের কিছু টিপস
কোন সময় ব্যায়াম করা ভালো

কোন সময় ব্যায়াম করা ভালো – জেনে নিন ব্যায়ামের কিছু টিপস

ব্যস্ততম এই সময়ে নিজেকে সুস্থ ও ফিট রাখার জন্য ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। তবে আমরা অনেকেই জানি না দিনের কোন সময়ে ব্যায়াম করা উচিত। আপনি সারাদিনে যেকোনো সময় ব্যায়াম করতে পারেন। তবে সময়ভেদে রয়েছে ব্যায়ামের কিছু পরিবর্তন। সুস্বাস্থ্য এর জন্য আপনাকে অবশ্যই শরীর  চর্চা করতে হবে। তবে সেটি সঠিক নিয়ম এবং সঠিক সময়ে। 

আমরা অনেকেই নিজেদের ফিট রাখার জন্য শরীরচর্চা করতে চাই। তবে দিনের কোন সময় ব্যায়াম করা ভালো এটি নির্বাচন করতে পারি না। তাই আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের ব্যায়ামের উপযুক্ত সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। 

দৈনিক কোন সময় ব্যায়াম করা ভালো

সুস্থ থাকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাবত   ব্যায়ামের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।  বরং পরিমাণের অধিক ব্যায়াম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা( WHO) এর মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা  ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। সপ্তাহে আড়াই ঘন্টা মানে দৈনিক ২১ মিনিট মাত্র। 

দিন রাত্রির হিসেব করলে দৈনিক ২৪ ঘণ্টা। ২৪ ঘণ্টাকে মিনিটের হিসেব করলে, দৈনিক ১ হাজার ৪৪০ মিনিটের মাঝে মাত্র ২১ মিনিট ই যথেষ্ট আপনার জন্য। আপনি যতোই কর্মব্যস্ত থাকুন না কেন। সুস্থ থাকার জন্য দৈনিক ২১ মিনিট আপনার নিজের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। অথবা দৈনিক ব্যায়াম এর সুযোগ না থাকলে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন।  

ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়  

নিয়মিত ব্যায়ামের  ফলে একজন মানুষের  শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। তবে ভুল সময় ও ভুল নিয়মে ব্যায়াম , আপনার শরীরের জন্য একেবারেই অনুচিত।  দিনের কোন সময় ব্যায়াম করলে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন এ নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে। তাই আপনার শারীরিক অবস্থা বুঝে আপনি নিজের সুবিধা মতো যেকোনো সময় ব্যায়াম করে নিতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, দিনের কোণ সময়ে ব্যায়ামের কি কি উপকারিতা রয়েছে। 

সকাল

সকাল

সকাল হলো শুভ্রতার অন্যতম প্রতীক। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর একজন মানুষ মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকে । তাই দিনের শুরুতেই আপনি ব্যায়াম করে নিতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে  শরীরচর্চা করলে এটি আপনাকে সারাদিন কাজে অ্যাকটিভ হতে  এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। তবে সকালে ভারী ব্যায়াম গুলো করা অনুচিত কারণ এসময় শরীরে পর্যাপ্ত এনার্জি থাকে না। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি হাঁটতে পারেন, অথবা দৌড়ানো, সাঁতার কাটা কিংবা সাইকেল চালাতে পারেন। এছাড়া নিজের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য সকালে যোগব্যায়াম ও করতে পারেন। 

সকালে  ব্যায়ামের ফলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং  ব্যক্তিকে সারাদিন এনার্জেটিক রাখতে সাহায্য করে। আপনি যখন সকালে নিয়মিত হাঁটবেন , তখন এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। এছাড়া হাঁটার ফলে একজন ব্যক্তির শরীরে  ঘাম হয়। এই ঘাম আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে । ফলে আমাদের ত্বক সুন্দর থাকে। তবে মনে রাখবেন একেবারেই খোলা পেটে অথবা ভরা পেটে ব্যায়াম করা অনুচিত। তাই সকালে ব্যায়ামের পূর্বে এই বিষয় টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন। 

দুপুর

অনেকেই দুপুর কে দিনের সবচেয়ে অলস সময় মনে করেন। একেবারে ভরা পেটে ব্যায়াম করা উচিত না। অন্যদিকে অনেকের শরীরেই দুপুরে পর্যাপ্ত এনার্জি থাকে না ব্যায়ামের জন্য। তাই দুপুরে ব্যায়াম না করাটাই ভালো। তবে কেউ যদি সারাদিনে ব্যায়ামের জন্য পর্যাপ্ত সময় না পান, সেক্ষেত্রে শরীরের অবস্থা বুঝে দুপুরে হালকা শরীরচর্চা করে নিতে পারেন। বিশেষ করে দুপুরের খাবার গ্রহণের পর কিছুক্ষণ হাটুন। এটি আপনাকে দ্রুত হজমে সাহায্য করবে সেই সাথে পেটের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করবে। তবে মনে রাখবেন  ব্যায়ামের সঠিক সুফল পাওয়ার জন্য আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। তাই ধৈর্য ধারে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

বিকেল

অনেকের মতেই বিকেল হলো ব্যায়ামের সবচেয়ে উপযোগী সময়। সাধারণত ব্যায়ামের উপযুক্ত সময় ধরা হয় ঘুম থেকে উঠার ৬-১২ ঘণ্টার মাঝে। যারা ভারি ব্যায়াম করতে চান তারা বিকেলের সময়ে ব্যায়াম করে নিতে পারেন। অনেক বিশেষজ্ঞরা সকালে ও রাতে ভারি ব্যায়াম গুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। তাই সঠিক নিয়মে ভারি ব্যায়াম করতে চাইলে বিকেল হলো ব্যায়ামের আদর্শ সময়।  

সন্ধ্যা বা রাত 

ব্যস্ততম এই সময়ে আমরা অনেকেই  শরীর চর্চার জন্য সময় বের করতে পারি না। সারাদিন অফিস বা ক্লাশ শেষে এই সময় তাই যেন দিনের সকল ক্লান্তি বোধ এসে ভর করে।  তবে সঠিক ভাবে শরীরচর্চা করার অন্যতম প্রধান দিক হলো ব্যায়ামের পূর্বে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত এনার্জি থাকতে হবে। ক্লান্তিবোধ বা মানসিক স্ট্রেস থাকলে আপনি ব্যায়ামের দিকে মনোযোগী হতে পারবেন না। এছাড়া জার্নাল অফ ফিজিওলজফি  তে প্রকাশিত একটু প্রতিবেদনের মতে সন্ধ্যা ৭ টার পর ব্যায়াম করলে এটি অনেকের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তবে আমাদের শরীরের জন্য রাতের ঘুমটা অনেক বেশি উপকারী। 

তাই সন্ধ্যার পর ভারি ব্যায়াম গুলো এড়িয়ে চলুন।আপনি চাইলে সন্ধ্যায় হাঁটতে পারেন, অথবা সাইকেলিং করতে পারেন। তবে সারাদিনের ক্লান্তি ভাব দূর করতে চাইলে আপনি সন্ধ্যায় যোগব্যায়াম টাও করতে পারবেন। 

জেনে নিন ব্যায়ামের কিছু টিপস

জেনে নিন ব্যায়ামের কিছু টিপস

  • নিজেকে সুস্থ ও ফিট রাখার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। খাবার গ্রহণে সচেতন না হলে আপনার ব্যায়াম করা বৃথা।
  • একেবারে খোলা পেটে বা ভরা পেটে ব্যায়াম করা যাবে না। 
  • ব্যায়াম শেষে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তবে ব্যায়াম শেষ করার সাথে সাথে অতিরিক্ত পানি খাবেন না। ব্যায়াম শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন এবং পানি পান করুন। 
  • ব্যায়ামের সময় আরামদায়ক কাপড় পরিধান করুন।
  • শারীরিক ক্ষমতা ও বয়স অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। 
  • ব্যায়াম শুরু করতে চাইলে প্রথমে হালকা ব্যায়াম আরম্ভ করুন। শুরুতেই ভারি ব্যায়াম গুলো এড়িয়ে চলুন। 
  • গর্ভবতী অবস্থায় সব ধরনের ব্যায়াম করা উচিত না। তাই গর্ভবতীদের জন্য উপযোগী এমন ব্যায়াম করুন। 
  •  মানসিক স্ট্রেস নিয়ে ব্যায়াম করবেন না। আপনার মন ভালো না থাকলে আপনি কিছুক্ষণের মাঝেই ব্যায়ামের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই মন সুন্দর ও শান্ত রেখে ব্যায়াম শুরু করুন। 
  • ব্যায়ামের শুরুতে অন্তত ১০-১৫ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে নিন।
  • ভারি ব্যায়ামের ফলে শারীরিক কষ্ট না অস্বস্তি অনুভব করলে বিশ্রাম নিন এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিন। 

ঘরে বসেই খুব সহজে ব্যায়ামের উপায়

আমাদের অনেকেরই ধারণা  জিমে যাওয়া ছাড়া ব্যায়াম করা সম্ভব না। অথচ অনেকেরই জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার মতো সময় বা অর্থ কোনোটাই পর্যাপ্ত থাকে না। তবে আপনি চাইলে খুব সহজে বাসায় বসেই ব্যায়াম করতে পারবেন এবং নিজেকে ফিট রাখতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক , বাসায় বসে খুব সহজে কোন কোন ব্যায়ামগুলো করতে পারেন-

বাসায় খুব সহজে আপনি ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারবেন। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজে মাঝে সবচেয়ে প্রচলিত হল পুশ আপ, সিট আপ,লেগ রেইস এবং দড়ি লাফ। এই ব্যায়াম গুলো আপনার শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে ফিট রাখবে। এছাড়া আপনি বাসাতে বসে ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়া দৈন্দন্দিন কিছু কাজের মাধ্যমেও আমাদের শরীরচর্চা  হয়ে থাকে। যেমন ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ঘর মোছা, কাপড় কাচা। লিফটের বিপরীতে  সিঁড়ি বেড়ে ওপরে উঠা ইত্যাদি। এছাড়া নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস ও সাঁতার কাটা বা সাইকেলিং করতে পারেন। 

উপসংহার 

নিজেকে শারীরিক বা মানসিক ভাবে ফিট রাখার জন্য ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। তাই সুস্থ থাকার জন্য ব্যস্ততম এই সময়েও নিজের জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ রেখে  নিয়মিত শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে। তবে শরীরচর্চা শুরু করার পূর্বে আমাদের সকলেই ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যেওয়া উচিত। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমরা দৈনিক কোন সময় ব্যায়াম করা ভালো, এবং কোণ সময়ে ব্যায়াম করা ভালো ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা এই লেখার মাধ্যমে সকল বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। সবাই ভালো থাকুন এবং নিজের যত্ন নিন।