You are currently viewing যে কোন ঋতুতে মুখে ব্রণ হলে কি ক্রিম মাখা উচিত?
মুখে ব্রণ হলে কি ক্রিম মাখা উচিত

যে কোন ঋতুতে মুখে ব্রণ হলে কি ক্রিম মাখা উচিত?

বর্তমানকালে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কারণে ব্রণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ব্রণ এমন একটি ত্বকীয় সমস্যা যা বয়স ভেদে সবারই হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়সন্ধিকালে ব্রণের প্রভাব বেশি দেখা যায়। তাই একটি প্রশ্ন মাথায় আসে যে ব্রণ হলে করণীয় কি? মুখে ব্রণ হলে কি ক্রিম মাখা উচিত?

ত্বকের সেবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম ক্ষরণ হয়। কিন্তু সেই গ্রন্থির ছিদ্র ব্যাকটেরিয়া বা জীবানুজনিত কিংবা আবহাওয়া জনিত কারণে বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত জায়গা ফুলে যায় এবং চারপাশে লাল বর্ণ ধারণ করে। ইতিমধ্যে রক্তের শ্বেত কণিকা জীবনকে প্রতিহত করে তরলে পরিণত হয়। এটি মূলত ব্রণ নামে পরিচিত। ব্রণের কারণে ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং অতিরিক্ত খোঁচাখুঁচি করলে সেখানে গর্ত সৃষ্টি হয় যা স্থায়ীভাবে মুখে সৌন্দর্যকে নষ্ট করে। তাছাড়া ব্রণ হওয়া ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয় যা অস্বস্তির তৈরি করে। 

তাই ব্রনের সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করা যায়। বাজারে ব্রণের জন্য অনেক রকমের ক্রিম রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্রিম সঠিক রাসায়নিক অনুপাত মেনে তৈরি করা হয় না। যার ফলে ত্বকে আরো নানা ধরনের সমস্যা হয়। নিচে ব্রণের জন্য সবচেয়ে সেরা ও উপকারী কয়েকটি ক্রিমের বিবরণ দেওয়া হল:

ব্রণ দূর করার সেরা ৬ টি ক্রিম 

এই আর্টিকেলে আজকে আমরা বাজারের সেরা ৬ টি ব্রণ প্রতিরোধী ত্বকবান্ধব ক্রিম নিয়ে আলোচনা করব। মূলত মেয়েদের মুখের ব্রণ দূর করার ক্রিম ও ছেলেদের মুখের ব্রণ দূর করার ক্রিম একই। তাই নিম্নোক্ত ব্রণ প্রতিরোধী ক্রিমগুলো নারী-পুরুষ উভয়ই ব্যবহার করতে পারবে। 

মুখে ব্রণ হলে কি ক্রিম মাখা উচিত

নোভাক্লিয়ার একনে ক্রিম

এটি একটি ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ডেড ক্রিম যা ব্রণের জন্য অধিক কার্যকরী। মূলত তেল চকচকে এবং অপরিষ্কার ত্বকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রণ হয় কারণ তা ত্বকের লোম ছিদ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়। ফলে অভ্যন্তরীণ তরল বের হতে পারে না এবং ব্রণের সৃষ্টি হয়। 

নোভাক্লিয়ার একনে ক্রিমে রয়েছে স্যালিসাইলিক এসিড যা ত্বকের মৃত কোষকে তুলে ফেলে এবং নতুন ত্বকের উদ্ভব ঘটায়। এছাড়া এতে রয়েছে প্যান্থেনল যা আপনার ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। ত্বকে উপস্থিত ময়লা ও জীবাণুকে দূর করার জন্য স্যালিসাইলিক এসিড অধিক কার্যকরী। এছাড়া ক্রিমে উপস্থিত বিভিন্ন নির্যাস ও অন্যান্য উদ্ভিজ্জ উপাদান আপনার ত্বককে রাখে সতেজ, কোমল ও সুন্দর।

ডার্মাডিক্স এন্টি একনে সিরাম 

কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন এই সিরামটি বাজারে যেকোনো ফার্মেসিতেই পাওয়া যাবে। এর মাল্টি একটিভ ফর্মুলা আপনার ত্বককে রাখে ব্রণমুক্ত, সতেজ, পরিষ্কার, কোমল ও উজ্জ্বল। 

ত্বকের সব ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করতে ডার্মাডিক্স এন্টি একনে সিরাম এর কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া এর রোল অন ফর্মুলা এটিকে করেছে অনন্য। ত্বকের ব্রণ, ব্রণজনিত দাগ, লালচে ভাব, চুলকানি ইত্যাদি দূর করার জন্য ডার্মাডিস্ক এন্টি একনে সিরাম হতে পারে এক অনবদ্য হাতিয়ার।

নরম্যাকনে স্পট একনে ট্রিটমেন্ট 

ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ডেড এই ক্রিমটি ত্বককে ব্রণের দাগ থেকে দ্রুত মুক্ত করে। এটি ডার্মাটোলজিস্টদের থেকে স্বীকৃত একটি ক্রিম যা ব্রণজনিত যে কোন সমস্যার জন্য খুবই কার্যকর। মূলত বিভিন্ন ধরনের এসিডের সঠিক মিশ্রণে তৈরি এই ক্রিমটি কার্যকারিতার দিক থেকে অনন্য। বর্তমানকালে অনেক তরুণ তরুণীদের কাছে পছন্দের একটি ক্রিমের মধ্যে এটি অন্যতম।

এতে রয়েছে স্যালিসাইলিক এসিড যা ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষ বের করে আনে। ওলেয়িক এসিড আপনার ত্বককে তৈলাক্ত অবস্থা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে উপস্থিত লরিক এসিড ও মাইরিস্টিক এসিডের কমপ্লেক্স ফর্মুলা ত্বককে রাখে সতেজ ও প্রাণবন্ত। মূলত আপনার মুখের ব্রনের দাগ দূর করার জন্য নরম্যাকনে স্পট একনেট ট্রিটমেন্ট হতে পারে সেরা সমাধান। 

ওয়ান নাইট একনে প্যাচ 

এটি মূলত দ্রুত সমাধানের জন্য বহুল প্রচলিত একটি এন্টি একনে ক্রিম। যদিও এমনটা দাবি করা হয় যে এটি একদিনের মধ্যেই কাজ করে তবে অনেকাংশে বাকি ক্রিমের চেয়ে এটি অনেক দ্রুত কাজ করে। যেমন আপনার যদি চার পাঁচ দিনের মধ্যেই কোন জরুরী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয় এবং বর্তমানে আপনার মুখে ব্রণ রয়েছে তাহলে ওয়ান নাইট একনে প্যাচ ব্যবহার করে অনেক ভালো ফলাফল পাবেন। 

এই ক্রিমটিতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ও হাইড্রোকলয়েড এর আদর্শ মিশ্রণ যা খুবই তাড়াতাড়ি যে কোন ত্বকের ব্রণকে সহজে প্রতিহত করতে পারে। যে কোন ক্রিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্বকের ph মান বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্রিমটি ত্বকের পিএইচ মান বজায় রেখে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং ব্রণের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া ত্বকের মসৃণতা উজ্জ্বলতা এবং নমনীয়তা রক্ষা করার জন্য ওয়ান নাইট একনে প্যাচ ব্যবহার করা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত।

নরম্যাকনে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ক্লিনসিং ফেসিয়াল জেল 

আপনি যদি ত্বকের জ্বালাপোড়া বিহীন একটি ক্লিনজারের খোঁজ করেন তাহলে নরম্যাকনে আপনার জন্য নিয়ে এসেছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ক্লিনসিং ফেসিয়াল জেল। সাধারণত ত্বক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ব্যবহার অধিক হয়ে থাকে। এই জেলটি আপনার ত্বককে পরিষ্কার করে ত্বকের আসল লাবণ্য ফিরিয়ে আনে এবং ব্রণকে দূর করে।

মুখে ব্রণ হলে কি ক্রিম মাখা উচিত

এই জেলটিতে গ্রিন টি নির্যাস ব্যবহৃত হয়েছে যা ত্বকের ময়লা দূর করে ত্বককে পরিষ্কার রাখে। আরেক উপাদান জিঙ্কিডোন ব্রণের সকল জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে এবং নতুন ব্রণ হওয়াকে দমন করে। এই জেলটি অ্যান্টিসেপটিক হওয়ায় তা ত্বককে ইনফেকশনের হাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে এই জেলটি অধিক কার্যকরী।

নোভাক্লিয়ার একনে ক্লিনজার

ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বজায় রাখার মূলমন্ত্র হলো ত্বককে পরিষ্কার রাখা। অপরিষ্কার এবং তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়ার হার অনেকগুণ বেড়ে যায়। এর কারণ হলো তোকে জমে থাকা ধুলাবালির কণা ও তৈলবিন্দু লোমছিদ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়। যার ফলে ত্বকে ব্রণের সৃষ্টি হয়। সুতরাং ব্রণ প্রতিরোধ করতে ক্লিনজারের বিকল্প নেই।

নোভা ক্লিয়ার একনে ক্লিনজার ত্বককে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে এবং লোম ছিদ্র থেকে ময়লা ও তেল দূর করে। যার ফলে ত্বক থেকে অধিক পরিমাণ সেবাম নিঃসরণ প্রতিহত হয় যা ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল বানায়। এই ক্লিনজারের উপাদানে থাকা গ্রিন টি এর নির্জাস ত্বককে জ্বালাপোড়ার হাত থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত এই ক্লিনজারটি ব্যবহারে আপনার ত্বক থাকবে সুস্থ কোমল, ব্রণহীন ও উজ্জ্বল।

উপসংহার 

আপনি যদি ওপরের যেকোনো একটি ক্রিম ব্যবহার করতে চান তাহলে প্রথমে আপনার নিকটস্থ ডার্মাটোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হন এবং তার থেকে জেনে নিন আপনার ত্বকে তা কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকের ত্বক কোন নির্দিষ্ট একটি উপাদানের প্রতি অধিক মাত্রায় অসহনশীল। তাই ভুল কোন ক্রিম ব্যবহার হতে পারে আপনার ত্বকের জন্য অধিক ক্ষতিকর। 

কিন্তু খুব বেশি ব্যতিক্রম ছাড়া উপরের ছয়টি ক্রিম আপনার ত্বকে কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না। তবে অবশ্যই আপনাকে আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতেই হবে। শুধু ক্রিম ব্যবহার কখনোই সমাধান নয়। তো ক্রিম ব্যবহারের পাশাপাশি যে কাজ করতে পারেন – ত্বককে ব্রণের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন, প্রত্যেকদিন মুখকে পরিষ্কার করুন ও চিকিৎসকের দেয়া নির্দেশ অনুসরণ করুন। তাহলেই আপনি হতে পারেন সুন্দর, সতেজ ও কোমল ত্বকের অধিকারী। এরকমই লাইফস্টাইল ও হেলথ রিলেটেড পোস্ট পেতে সাথেই থাকুন। 

Leave a Reply