You are currently viewing প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়, চুলের জন্য উপকারী ভেষজ উপাদান
উপকারী ভেষজ উপাদান

প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়, চুলের জন্য উপকারী ভেষজ উপাদান

সৌন্দর্যের অন্যতম রহস্য হলো চুল। যেকোনো সাজের জন্য অনেকটাই চুলের উপর নির্ভর করতে হয়। ভারী বা হালকা যেটাই হোক না কেন আপনাকে আগে চুল সেট করার ব্যাপারে নজর দিতেই হয়। 

চুল যদি হয় সুন্দর, কোমল ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল তাহলে সেটা আপনাকে এক্সট্রা আকর্ষণ বাড়িয়ে দিবে। তাই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে চুলের যত্নের ব্যাপারে। বিভিন্নভাবে আপনি চুলের যত্ন নিতে পারবেন।

চুলের জন্য উপকারী ভেষজ উপাদান 

দক্ষিণ এশীয়রা কয়েক দশক আগেও সবচেয়ে সুন্দর, উজ্জ্বল আর ঘন চুলের অধিকারী ছিল। তবে জীবনযাত্রার মান, দূষণের হার বৃদ্ধি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং জলবায়ু ভারসাম্যহীনতার কারণে সৃষ্ট আবহাওয়ার পরিবর্তন চুলের স্বাস্থ্যকে একেবারে ধ্বংস করে দিচ্ছে। 

এরপরও আশার কথা হলো, এশীয়দের আয়ুর্বেদের অনেক গোপন রহস্য জানা আছে। আমাদের চুলের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার উপাদানগুলো কিন্তু আমাদের আশেপাশেই থাকে। যাকে আমরা ভেষজ উপাদান বলে চিহ্নিত করি। এখন আসুন কিছু ভেষজ উপাদান সম্পর্কে জেনে নেই। 

উপকারী ভেষজ উপাদান

আমলকী

আমলকী এমন একটি ভেষজ ফল যেটা চুলকে সতেজ করে এবং চুলে শক্তি যোগায়। এটার ভিটামিন, খনিজ, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট মাথার ত্বকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের গোড়াকে আরো শক্তিশালী করে। আমলকী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিডে পূর্ণ, যা খুশকি কমাতে সাহায্য করে এবং চুল থেকে ময়লা ও অতিরিক্ত তেল চিটচিটে ভাব দূর করে দেয়। নিয়মিত চুলে তেলের সঙ্গে আমলকির নির্যাস ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুলের বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয়। এই ভেষজ উপাদানটি অকালে চুল পাকা রোধ করতে পারে।

মেথি

মেথি একটি অতি সাধারণ রান্নার উপাদান। আমাদের দেশে মেথি সারা বছরই পাওয়া যায়। মেথির অসাধারণ ঔষধি গুণাবলি রয়েছে এবং চুলের জন্য এটি দারুণ উপকারী। এতে প্রোটিন, আয়রন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা চুলকে পুষ্টি দেয় এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে নিকোটিনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা খুশকি ও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।

মেথিতে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েড ও স্যাপোনিন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আছে, যা চুলের শুষ্কতা সহ মাথার ত্বকের সমস্যা নিরাময় করতে সহায়তা করে। এটি টাক পড়া এবং চুল পাতলা হয়ে যাওয়াও রোধ করতে ভূমিকা রাখে। মেথি চুলের দ্রুত ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য চুলের ফলিকলকে পরিপুষ্ট করে।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা চুলের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় কাজে লাগে। অ্যালোভেরাতে ভিটামিন এ, সি এবং ই রয়েছে যা চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলের ফলিকল গুলোকে ভেতর থেকে মেরামত ও পুনরুজ্জীবিত করে। এটি ভিটামিন বি ১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা চুল পড়া রোধ করতে পারে এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং অতিরিক্ত তেল নিঃসরণকে কমাতে পারে। 

ভৃঙ্গরাজ

স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন করে, চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ব্রাক্ষ্মী

চুলের গোড়া শক্ত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। 

মঞ্জিষ্ঠা

স্কাল্পকে ময়েশ্চারাইজড রাখে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।

কারিপাতা

এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্কাল্পকে ময়েশ্চারাইজ করে চুলের মৃত কোষগ্রন্থি দূর করে।

কালোজিরা 

স্কাল্পকে ভালো রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

রিঠা

চুল পড়া বন্ধ করে এবং স্কাল্পকে পরিষ্কার রাখে।

চুল পড়া ঠেকাতে ভেষজ চা 

এটা চা প্রেমীদের জন্য দারুণ সুখবর! ভেষজ চা স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি কাজে লাগানো যাবে চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানেও। আসুন জেনে নেই চুল পড়া ঠেকাতে কি কি চা আমরা খেতে পারি।

অপরাজিতার চা বা ব্লু টি

গত কয়েক বছরে এই চায়ের জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়েছে। কারণ এর গুণাগুণ ও উপকারিতা অনেক। অপরাজিতা চায়ে অ্যান্থোসায়ানিন নামের একটি উপাদান পাওয়া যায়, যা আপনার স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।

জবা ফুলের চা বা হিবিসকাস টি

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই চা কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুল থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও শক্তিশালী। পাশাপাশি চুল পড়া কমে ও চুল বাড়েও দ্রুত।

অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ জবা ফুলের চা পান করলে চুল হয় ঝলমলে ও উজ্জ্বল।

ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমিয়ে দেয় জবা ফুলের চা। ফলে চুলের তেলতেলে ভাব ও খুশকি কমে।জবা ফুলের চা সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার পান করুন। এটি যেমন চুলের বৃদ্ধি বাড়াবে, তেমনি বন্ধ করবে চুল পড়া। 

স্পিয়ারমিন্ট গ্রিন টি

চিকিৎসকের মতে, আপনার যদি পিসিওএস কিংবা অ্যাকনের সমস্যা থাকে, তবে এই চা-কে সঙ্গী বানিয়ে নিন। স্পিয়ারমিন্ট গ্রিনটি-এর গুণে অ্যাকনের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে এমন উপকার পেতে নিয়মিত এই চা পান করা জরুরি। 

তাই দিনে অন্তত দুই বার এই চা খেতে হবে আপনাকে। এই চায়ে চুমুক দেওয়ার পরে আপনার মন যেমন সতেজ হয়ে উঠবে, তেমনই ত্বকের অন্দরে অনুভব করবেন তরতাজা ভাব।

উপকারী ভেষজ উপাদান

চুলের যত্নে তেলের ব্যবহার 

চুলের অন্যতম প্রধান খাবার তেল। তেল চুলের গোড়ায় পুষ্টির জোগান দেয়। তবে কীভাবে তেল ব্যবহার করতে হবে তার জন্য যথেষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। আসুন জেনে নেই কিছু প্রয়োজনীয় টিপস। 

তেলের প্রকার

কোন তেল ব্যবহার করতে হবে, তা নির্ভর করে চুলের চাহিদার ওপর। একেক তেলে একেক ধরনের ভিটামিন থাকে। নারকেল, ক্যাস্টর,তিল,বাদাম, আমলাতেল চুলে ব্যবহারের জন্য বেশ কার্যকরী। 

তেল গরম করে নিন

ব্যবহারের আগে তেল উষ্ণ গরম করে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। উষ্ণ তেল চুলের ফলিকল গুলোকে উদ্দীপ্ত করতে সাহায্য করে। পরিমাণমতো তেল বোতল থেকে ছোট বাটিতে ঢেলে নিয়ে ব্যবহার করলে সুবিধা হবে। আঙুল দিয়ে চুলে পার্টিশন তৈরি করে আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে তেল লাগিয়ে নিতে হবে।

ম্যাসাজ করুন

বেশির ভাগ মানুষ যেভাবে তেল ব্যবহার করেন, তাতে চুল ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। হাতের তালু দিয়ে তেল মাথার ত্বকে ঘষলে চুল ভেঙে যায়। তাই ১০-১৫ মিনিট ১০ আঙুলের সাহায্যে গরম তেল নিয়ে মাথার ত্বকে বৃত্তাকার গতিতে ম্যাসাজ করতে হবে। এটা কেবল রক্ত​সঞ্চালনকে উন্নত করে না, বরং প্রশান্তিও দেয়। যাঁরা স্ট্রেসের সঙ্গে লড়াই করছেন, তাঁদের জন্য ‘হট অয়েল ম্যাসাজ’ বেশ কার্যকরী।

চুলের যত্নে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার 

 চুলের যত্ন নিতে আমরা কত কিছুই না করে থাকি।তার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করি।  আসুন জেনে নেয়া যাক কিছু উপকারী টিপস।

নারকেল তেল এবং মধু

এক টেবিল চামচ নারকেল তেল, এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ লেবুর রস, দুই টেবিল চামচ দই এবং এক চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে শ্যাম্পুর পর চুলে লাগাতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা জলে। নারকেল তেল চুলকে কেবল মসৃণ এবং নরম হতে সাহায্য করে, চুলকে লম্বা এবং ঘন করে তোলে। 

টকদই

একটা ডিম ফেটিয়ে নিয়ে তাতে ৬ টেবিল চামচ টকদই ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটা চুলে লাগিয়ে হেয়ার ক্যাপ পরে ঢেকে রাখতে হবে ১৫-৩০ মিনিট। দইয়ের প্রোটিন এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড মাথার ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

কলার হেয়ার মাস্ক

কলা হল সেরা চুলের কন্ডিশনারগুলির মধ্যে একটা। এটা চুলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় এবং রুক্ষ এবং কুঁচকে যাওয়া চুলে আশ্চর্যজনক কাজ করে।একটি কলা, তিন টেবিল চামচ মধু, তিন টেবিল চামচ দুধ, তিন টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং একটি ডিম নিতে হবে। সবকটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে লাগাতে হবে চুলে। ১৫-৩০ মিনিটের জন্য রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা জলে।

উপকারী ভেষজ উপাদান

চুলের যত্নে শ্যাম্পু ব্যবহার

চুল ছোট হোক কিংবা বড় হোক পরিষ্কার রাখতে শ্যাম্পু করতে হবে নিয়মিত। চুল পরিষ্কার করা এবং একই সঙ্গে চুল ভালো রাখার জন্য দরকার সঠিকভাবে শ্যাম্পু করা।

প্রথমেই চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার বাছাই করে নিতে হবে। আপনার চুল শুষ্ক, তেলতেলে কিংবা মিশ্র ধরনের কী না তা বুঝে নিয়ে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার বাছাই করুন।

  • শ্যাম্পু করার পূর্বে চুল আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিন।
  • এরপর পুরো চুল ভালোভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে।
  • একটি বাটিতে শ্যাম্পুর সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে এর ঘনত্ব কমিয়ে নিতে হবে যেন তা চুলের গোড়ায় সহজে পৌঁছাতে পারে।
  • ১৫ মিনিট আঙুল দিয়ে আস্তে আস্তে মাথার ত্বক মালিশ করতে হবে। এতে রক্ত সঞ্চালন হবে, যা চুলের গোড়া মজবুত করবে। তা ছাড়া এভাবে চুলের ময়লাও উঠে আসবে।
  • ম্যাসাজের সময় হাতে অল্প করে পানি দিয়ে চুলে ফেনা করতে হবে।
  • এবার চুল ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন।

আশা করি, এখন আপনারা খুব সহজেই নিজেদের চুলের যত্ন  করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী সঠিক উপাদান ব্যবহার করে নিজের চুলকে উন্নত করতে পারবেন।

Leave a Reply