শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সকলের নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে শারীরিক ভাবে ফিট রাখতে সাহায্য করবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে এটি স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকর।
কথায় বলে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই। প্রতিদিন কত ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত, কোণ ব্যায়াম গুলো আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী উপকারী এবং বয়স ভেদে ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা সহ ব্যায়াম সম্পর্কে সকল বিস্তারিত তথ্য পাবেন আজকের এই আর্টিকেলে।
ব্যায়াম কত প্রকার ও কি কি
ব্যায়াম কে ইংরেজি তে বলা হয় Exercise. ব্যায়াম হলো একটি শারীরিক কার্যকলাপ যা সামগ্রিক ভাবে একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে একজন ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মাংসপেশি সচল থাকে। ব্যায়াম সাধারণত দুই প্রকার।
- সরঞ্জাম সহ ব্যায়াম ।
- সরঞ্জাম বিহীন ব্যায়াম।
সরঞ্জাম সহ ব্যায়াম
কোন নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে শরীরচর্চা করাকে সরঞ্জাম সহ ব্যায়াম বলে।
সরঞ্জাম সহ এমন কিছু ব্যায়াম হলো ক্লাইম্বিং রোপ, বল পাসিং, সাইক্লিং, রোমান রিং ইত্যাদি । সাধারণত জিমে গিয়ে আমরা সরঞ্জাম সহ ব্যায়াম করে থাকি। জিমে ব্যবহৃত এমন কিছু সরঞ্জামের নাম হলো স্কোয়াট স্টেশন, Barbells, pull up bar, Dump bells, Bench press ইত্যাদি।
সরঞ্জাম বিহীন ব্যায়াম
নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি ছাড়াই যখন আপনি শরীরচর্চা করবেন তখন তাকে বলা হয় সরঞ্জাম বিহীন ব্যায়াম। সরঞ্জাম বিহীন ব্যয়ামের মাধ্যমে আপনি ব্যয়বহুল সরঞ্জাম ছাড়াঈ খুব সহজে শরীরচর্চা করে নিজেকে ফিট রাখতে পারবেন। এমন কিছু ব্যায়াম হলো, পুশ আপ, বারপিস, জাম্পিং জ্যাক, Lunges , চিন আপ, দৌড়ানো ইত্যাদি।

প্রতিদিন কত ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত
লোকমুখে নিশ্চয় শুনেছেন শরীর ফিট তো আপনি হিট ! একটা ফিট শরীর শুধু আপনার শারীরিক সৌন্দর্য এর জন্যই না বরং মানসিক ভাবেও আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করে। আর এই ফিট শরীর পাওয়ার জন্য শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কোনো বিকল্প নেই। নিজেকে সুস্থ এবং ফিট রাখার জন্য আমরা অনেকেই ব্যায়াম করতে চাই। তবে ব্যয়ামের সঠিক পদ্ধতি ও দৈনিক কত ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি না। অথচ সঠিক নিয়মে শরীরচর্চা না করলে আপনি উলটো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই আমাদের সকলের ব্যায়াম এর সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে জানা উচিত।
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। সব কিছুর মতো শরীরচর্চা করার ও একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এর মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ২১ মিনিট অথবা সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াঈ ঘণ্টা ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের সকলের শারীরিক গঠন কিন্তু এক না। আমাদের সকলের শরীরের জন্য ব্যায়াম অনেক উপকারী হলেও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে আমাদের শরীরচর্চা তে ভিন্নতা আসবে। আপনার কোনো বন্ধু জিমে গিয়ে ভারী ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ব্যায়াম করছে জন্য আপনাকেঊ ঐ একঈ ব্যায়াম করতে হবে বিষয় টি কিন্তু তেমন না। আপনি আপনার শরীর এর অবস্থা বুঝে শরীরচর্চা করবেন।
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো ভিটামিন কোনটি?
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো ভিটামিন কোনটি?আপনি যদি প্রাথমিক ভাবে নতুন ব্যায়াম করা শুরু করেন তাহলে একসাথে সব ধরনের ব্যায়াম করা শুরু না করে ধীরে ধীরে ব্যায়াম গুলো আরম্ভ করুন। আপনি যদি মাঝারি ব্যায়াম করে থাকেন সেক্ষেত্রে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট যথেষ্ট। তবে আপনি যদি ভারী বা উচ্চ গতিসম্পূর্ন ব্যায়াম করতে চান সেক্ষেত্রে সপ্তাহে ৭৫ মিনিট ই যথেষ্ট।
দৈনিক জীবনে ব্যয়ামের সঠিক হিসেব
সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যয়ামের কথা কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন এতো সময় কোথায়। এতো কর্মব্যস্ততার মাঝে কি আদৌও সময় পাবেন? অথচ একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, সপ্তাহে ৭ দিন মানে প্রায় ১০ হাজার ৮০ মিনিট। আপনি দৈনিক ২১ থেকে ২২ মিনিট শরীর চর্চা করলেই হবে। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ১ হাজার ৪৪০ মিনিটের মাঝে মাত্র ২১ মিনিট!! এটি কিন্তু মোটেও কঠিন কিছু না। নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য এটুকু সময় নিজের জন্য আপনার অবশ্যই বরাদ্দ রাখা উচিত।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়ামের ক্ষতিকর দিক
প্রয়োজনের অতিরিক্ত শরীরচর্চা আপনার স্বাস্থ্য এর উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘসময় ধারে ব্যায়াম করার ফলে আপনার শরীর ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে শুরু করবে। চলুন জেনেও নেওয়া যাক অতিরিক্ত ব্যায়ামের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-
কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া
অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে আপনার কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। কিছুদিন ব্যায়াম করার ফলে যদি আপনার শরীর শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত অনুভব হয় সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়া ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি
ব্যায়াম আপনাকে মানসিক ভাবে উৎফুল্ল রাখে। তবে প্রভেন্তেটিভ মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার মতে, অতিরিক্ত শরীরচর্চা করার ফলে একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য এর অবনতি হয়। এসমই ব্যক্তি শারীরিক ভাবে দুর্বল অনুভব করে এবং একই সাথে তার রাগ,হতাশা, উদ্বেগ এবং মুগ সুইংয়ের মাত্রা ও বেড়ে যেতে পারে।
আঘাতের সম্ভাবনা
অতিরিক্ত ভারি ব্যায়ামের ফলে শরীরের বিভিন্ন পেশিতে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। আমাদের শরীরের লিগামেন্ট, হাড় ইত্যাদি ব্যায়ামের সময় অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই ব্যায়াম করার সময় আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যাতে কোনো ভাবেই শরীরের এই মাংসপেশি গুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
অনিদ্রার সমস্যা
অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অথচ রাতের ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
ওজন বাড়ার প্রবণতা বাড়ে
ব্যায়াম করলে শরীর ফিট থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে আপনার শরীর দুর্বল হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে ক্ষুধার পরিমাণ টা বেড়ে যায়। ফলে খাবার গ্রহণের পরিমাণ টা আগের তুলনায় বেড়ে যায় এবং দেহে অধিক পরিমাণে ক্যালোরি জমা হতে শুরু করে। এতে করে ওজন বেড়ে যায়।

ব্যায়াম করার সঠিক সময়
আমরা শরীরচর্চা করে থাকি নিজেদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রাখার জন্য। তবে শরীরচর্চার সঠিক সুফল পাওয়ার জন্য আপনাকে সঠিক সময়ে ব্যায়াম করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক দিনের কোণ সময়ে ব্যায়াম করলে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন।
সকাল
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ফ্রেশ মাইন্ডে ব্যায়াম করতে পারেন। এটি সারাদিন আপনাকে কাজে অ্যাকটিভ রাখতে সাহায্য করবে। সকালে ব্যায়ামের আরেকটি উপকারিতা হলো এটি খাবার হজমের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী। তবে সকালে ভারি ব্যায়াম এড়িয়ে চলায় ভালো। সকালে উঠে আপনি মর্নিং ওয়ার্ক এবং Yoga এর মতো ব্যায়াম গুলো করতে পারেন।
বিকেল
ব্যায়াম করার জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় এটি। বিশেষজ্ঞ দের মতে একজন ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠার ৬ ঘণ্টা থেকে ১২ ঘণ্টার মাঝে ব্যায়াম করা সর্বোত্তম। তবে দুপুরে ব্যায়াম না করাটাই ভালো। একেবারে ভরা পেতে ব্যায়াম করা ঠিক না। তাই দুপুরে খাবার গ্রহণের ২/৩ ঘণ্টা পরে আপনি বিকেলে ব্যায়াম করতে পারেন।
সন্ধ্যা বেলা
সারাদিনে কর্মব্যস্ততার ফলে আমাদের শরীর এসময় ক্লান্ত থাকে। তবে ক্লান্ত শরীরে ব্যায়াম করা উচিত না। তাই সন্ধাবেলাই ব্যায়াম করতে চাইলে অবশ্যই রিল্যাক্স হয়ে তারপর ব্যায়াম করা আরম্ভ করবেন। সন্ধ্যায় আপনি যোগব্যায়াম করতে পারেন। এটি আপনাকে মানসিক ভাবে শান্ত রাখবে। সেই সাথে আপনার সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মানসিক পেরেশানি দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়া আপনি চাইলে সন্ধ্যা বেলায় হাঁটতে পারেন বা সাইক্লিং ও করতে পারেন।
উপসংহার
আমরা অনেকেই শরীর চর্চার বিষয়ে অনেক বেশি উদাসীন। অথচ সুস্থ ও ফিট থাকার জন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই। তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত শরীর চর্চা করা। আশা করছি আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনারা ব্যায়ামের উপকারিতা ও প্রতিদিন কত ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ব্যস্ততম এই জীবনে নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন এবং সেই সময় টাকে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকুন।