You are currently viewing মুখের ব্যায়াম কিভাবে করবো? ত্বক উজ্বল রাখার ব্যায়াম
মুখের ব্যায়াম কিভাবে করবো?

মুখের ব্যায়াম কিভাবে করবো? ত্বক উজ্বল রাখার ব্যায়াম

স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য হলো একজন মানুষের বড় শক্তি। সুন্দর ত্বক কে না চায় বলুন!  আর এই সুন্দর ত্বক  বজায় রাখতে মুখের ব্যায়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মুখের ব্যায়ামকে  ইংরেজি তে বলা হয় Face Yoga. 

নিয়মিত মুখের ব্যায়ামের ফলে এটি আমাদের ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে এবং ত্বকের বাড়তি মেদ কমিয়ে ত্বক কে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। নামিদামি প্রডাক্ট ব্যবহার ছাড়াই ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বককে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারেন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না মুখের ব্যায়াম কিভাবে করবো! তাই আজকের এই ব্লগে আপনাদের জানাবো কীভাবে আপনি খুব সহজে মুখের ব্যায়াম করবেন এবং এই ব্যায়ামের উপকারিতা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিপস। 

মুখের ব্যায়াম কিভাবে করবো?

আমরা অমেকেই শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে নিজেকে ফিট রাখার জন্য শরীরচর্চা করে থাকি। তবে মুখের বাড়তি সৌন্দর্যের জন্য কি কখনো মুখের ব্যায়াম করেছিলেন? যদি উত্তর টা  “ না “ হয় তাহলে আমি বলবো এখন থেকেই আপনার এই ব্যায়াম করা উচিত। নামি দামি কসমেটিকস ব্যবহার না করেও আপনি আপনার ত্বক কে সুন্দর রাখতে পারবেন শুধু এই ব্যায়ামের মাধ্যমে। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী রয়েছে ব্যায়ামের ভিন্নতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক মুখের কোন সমস্যার জন্য আপনি কি ধরনের ব্যায়াম নির্বাচন করবেন। 

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ব্যায়াম 

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ব্যায়াম 

একটা উজ্জ্বল প্রাণবন্ত ত্বক আপনার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। কিন্তু নানা কারণে আমাদের ত্বকের এই উজ্জ্বলতা কমে থাকে। দিন যতো বাড়তে থাকে মুখ টা তটোই যেন মলিন হতে শুরু করে। তবে ফেস ইয়োগা এর মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্বলতা ফিরে পেতে পারেন। 

ফেস ট্যাপিং :  ফেস ট্যাপিং আপনার ত্বকের বাড়তি মেদ কমাতে এবং  ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। হাতের তালুর সাহায্য গালের উপরে, থুতনিতে এবং কপালে আঙুল দিয়ে আলতোভাবে প্রেসড করতে থাকুন। এতে করে আপনার ত্বকের বাড়তি মেদ দ্রুত কমবে সেই সাথে ত্বক আগের চেয়ে উজ্জ্বল হতে শুরু করবে। 

বেলুন ফুলানো : ত্বকে জেল্লা বাড়াতে এই ব্যায়ামটি বেশ উপকারী। দৈনিক অন্তত ৫ মিনিট বেলুন ফুলানোর প্র্যাকটিস করুন। হাতের কাছে বেলুন না পেলে বেলুন ফুলানোর মতো মুখাকৃতি করুন এবং মুখের উপরে প্রেশার দিন। এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে আপনার ত্বকে উজ্জ্বল ও প্রান্তবন্ত করে তুলবে।  

গালের ব্যায়াম : এই ব্যায়াম টি করার জন্য আপনি দুই হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে গালের পাশে চাপ দিতে থাকুন ও আঙুলগুলোকে ওপরের দিকে তুলুন। ধীরে ধীরে আঙুলের সাহায্য বেশ কয়েকবার এই ব্যায়াম টি  করতে থাকুন। নিয়মিত এই গালের ব্যায়ামের ফলে গালের মেদ কমবে সেই সাথে আপনার ত্বকে কে টান টান রাখতে সাহায্য করবে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই আপনার ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে।  

ডাবল চিন( Double Chin) কমানোর ব্যায়াম 

ডাবল চিন হলো আমাদের চোয়ালের চারপাশে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি। এই ডাবল চিন আমাদের সৌন্দর্য কে নষ্ট করে থাকে। ডাবল চিনের কারণে মুখের আকৃতি অনেক মোটা মনে হয়।  তবে মুখের কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমেই আপনি ডাবল চিন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

ম্যাসাজ :  আপনার চোয়ালের নিচে, অর্থাৎ যেই অংশে ডাবল চিন রয়েছে সেখানে দৈনিক আলতো হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করুন। ম্যাসাজ করার জন্য নারিকেল তেল কিংবা অলিভ ওয়েলের ব্যবহার করতে পারেন। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন

ঠোঁট প্রসারণ করে হাসুন : একটু চেয়ারের সাথে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বসুন। এরপর যতোটা সম্ভব ঠোঁট প্রসারণ করে হাসুন।  এসমনয় গলার মাংস পেশিগুলোকে সংকুচিত করে রাখুন এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে থাকুক। অন্তত ৩০-৬০ সেকেন্ড এভাবে হাসার চেষ্টা করুন। দৈনিক এভাবে ব্যায়ামের ফলে আপনার চোয়ালের গঠন সুন্দর হবে সেই সাথে ডাবল চিনের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। 

আকর্ষণীয় মুখাকৃতির ব্যায়াম

আমাদের সৌন্দর্য এর একটা বড় অংশ নির্ভর করে আমাদের মুখের আকৃতির উপরে।  অনেক সময় অতিরিক্ত ওজন বাড়া কিংবা  কমার কারণে মুখের গড়ন নষ্ট হয়ে যায়। আপনার চিবুক যখন সরু ও তীক্ষ্ণ থাকবে তখন আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী হতে পারবেন।

গাল ফুলানোঃ রাগ করে আমরা অনেকেই গাল ফুলিয়ে থাকি। তবে এই গাল ফুলিয়ে থাকার মাধ্যমেও আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি সম্ভব। এই ব্যায়াম টি করার জন্য ঠোঁট চোখা করে বেলুন ফুলানোর মতো করে আপনার মুখে বায়ু নিন এবং গাল ফুলিয়ে তুলুন। এরপর ধীরে ধীরে সেই বায়ু বের করে দিন। এভাবে ৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। 

মৎস্য মুখ :  এই ব্যায়াম টি করার জন্য ফুঁ দেওয়ার মতো করে ভঙ্গি করুন। এরপর আপনার গাল জিভ দিয়ে টেনে মুখের ভিতরে ঢুকানোর চেষ্টা করুন। ৫-১০ সেকেন্ড পর মুখ স্বাভাবিক করুন। দৈনিক অন্তত ৫-৭ বার এই ব্যায়াম টি করতে পারেন। 

ফুঁ দেওয়াঃ এই ব্যায়ামটি করার জন্য আপনি স্থির হয়ে দাঁড়ান অথবা বসে পড়ুন। এরপর মুখটাকে ওপরে তুলুন। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশকে ফুঁ দেওয়ার ভঙ্গি করতে থাকুন। দৈনিক ২০-২৫ বার এই ব্যায়াম অনুশীলন করতে থাকুন। এটি আপনার চোয়াল সরু করে আপনার মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। 

চিবুক ও ঘাড়ের ব্যায়াম :  ব্যায়াম টি করার জন্য স্থির ভাবে বসুন এবং গভীর ভাবে একটু শ্বাস নিন। এরপর মাথা ডান দিক  ঘুরিয়ে ডান কাঁধে চিবুক রাখার চেষ্টা করে। এরপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার মাথা বামদিকে ঘুরিয়ে বাম কাঁধে রাখুন।  এভাবে দৈনিক ৫-৭ বার ব্যায়াম টি করুন। 

পাঊটিংঃ

পাঊটিংঃ বর্তমান যুগে এসে আমরা প্রায় সবাই এই পাঊট কথাটি শুনেছি নিশ্চয়! অনেক সময় সেলফি তোলার সময় আমরা পাটিং করে ছবি উঠিয়ে থাকি। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে কিন্তু আপনি আপনার মুখের সুন্দর আকৃতি তৈরি করতে পারেন। এই ব্যায়াম টি করার জন্য  আপনার দুই গাল ভিতর দিক থেকে টেনে ধরুন এবং ঠোঁট এগুলোকে কিস করার মতো করুন। ১০ সেকেন্ড এভাবে থাকার পর মুখ স্বাভাবিক করুন। ভালো ফলাফলের জন্য  খুব দ্রুত ভাবে এই ব্যায়াম টি  ১৫-২০ বার করতে থাকুন। 

ভাওয়েল উচ্চারণের ব্যায়াম :  ইংরেজিতে ভাওয়েল হলো A, E, I, O, U – এই শব্দগুলো ধীর গতিতে উচ্চারণ করেই আপনি মুখের ব্যায়াম করতে পারেন।  শব্দগুলো উচ্চারণের সময় অবশ্যই মুখের উপরে প্রেশার দিন। দৈনিক অন্তত ২-৩ মিনিট ধরে এই ব্যায়ামটি করুন।

 কপালের বলিরেখা বা ভাজ দুর করার ব্যায়াম

বয়সের সাথে সাথে অনেকের কপালে ভাজের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত  ব্যায়াম করুন।  ধীরস্থিরভাবে বসে পড়ুন, এবং কপালে ভাঁজ না ফেলে যথাযম্ভব চোখ বড় করে তাকানোর চেষ্টা করুন। এছাড়া দৈনিক হাতের তালুতে সামান্য অলিভ ওয়েল মিশিয়ে আঙ্গুলের সাহায্য কপালে মালিশ করতে পারেন। এটি আপনার কপালের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করবে। 

চোখের ব্যায়াম

একজোড়া সুন্দর চোখ যেনো আপনার সৌন্দর্য এর একটি  গুপ্ত রহস্য। অথচ নানা অবহেলা ও অযত্নে আমাদের চোখের সৌন্দর্য নষ্ট হতে শুরু করে। চোখের নিচে কালো দাগ, চোখের ফোলাভাব ও চোখের নিচের ফাইনলাইন আমাদের চোখের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলে। তাই চোখ কে সুন্দর রাখার জন্য ব্যায়াম করা খুব জরুরি। 

চোখের নিচের কালো দাগ কমানোর জন্য এক চোখ বন্ধ করুন, এবং অন্য চোখটি খোলা ও বন্ধ করার চেষ্টা করুন। দৈনিক ২০-২৫ বার একটানা এই ব্যায়াম টি করতে পারেন। এতে করে চোখের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দুটিই  বৃদ্ধি পায়। 

ফেস ইয়োগা কখন করা উচিত

ফেস ইয়োগা করার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। আপনি যেকোনো সময় এই ব্যায়াম করতে পারেন। তবে ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই ফ্রেশ মাইন্ডে থাকার চেষ্টা করুন। আপনি যদি মানসিক ভাবে প্রস্তুত না থাকেন তাহলে ব্যায়ামের সময় আপনার মনোযোগ আসবে না। তাই দৈনিক অন্তত ১০-১৫ মিনিট সময় হাতে নিয়ে ব্যায়াম শুরু করুন। 

সৌন্দর্য সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের নিজের যত্ন নেওয়া উচিত। নামিদামি ব্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহারের মাধ্যমেই শুধু নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব না। সুন্দর থাকার জন্য প্রয়োজন ত্বকের সঠিক যত্ন ও একটু সচেতনতা। আশা করছি আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনি মুখের ব্যায়াম কিভাবে করবেন ও কোন নিয়মে করবেন এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছেন। তাই নিজের জন্য একটু সময় বের করুন। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন