You are currently viewing নখ কাটা কি ক্ষতিকর  – ভুল নিয়মে নখ কাটছেন না তো?
নখ কাটা কি ক্ষতিকর?

নখ কাটা কি ক্ষতিকর – ভুল নিয়মে নখ কাটছেন না তো?

সুন্দর ও পরিষ্কার নখ আমাদের হাতের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। নখ বড় রাখার বিষয়ে নারীরা একটু বেশি যত্ন নিয়ে থাকেন। তবে দুর্বল নখ সহজেই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। তাই নখ কেটে ফেলতে হয়। 

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে নখ কাটা কি ক্ষতিকর?আসলে আমরা নখ কীভাবে কাটছি বা কতবার কাটছি সেটার ওপর নির্ভর করবে নখ কাটা ক্ষতিকর কিনা। সঠিক যত্ন ও পদ্ধতি মেনে নখ কাটা ক্ষতিকর নয়। বরং এটি একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে কাটা এড়িয়ে চলা উচিত। সঠিক পদ্ধতিতে নখ কাটা নখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, তবে ভুল পদ্ধতি বা অতিরিক্ত কাটা ক্ষতিকর হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

অতিরিক্ত ছোট করে নখ কাটা 

নখ কাটতে গিয়ে অনেক সময় অতিরিক্ত ছোট করে ফেলি। এতে নখের বেশি গভীর পর্যন্ত কেটে ফেলায় নখের নিচের চামড়া কেটে ক্ষত সৃষ্টি হয়।কখনো কখনো নখের কোনা দেবে যায়। আবার কখন নখ ভেঙে যায়। তাই এই সমস্যা এড়াতে নখ কাটার বিষয়ে আমাদের সকলের অবশ্যই সর্তক হওয়া উচিত।  

জীবানুমুক্ত নেলকাটার ব্যবহার না করা

নখ কাটার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নখ কাটার আগে অবশ্যই নেলকাটার বা নেল কার্টি করার জিনিসগুলো অবশ্যই জীবাণুমুক্ত হতে হবে। কারণ একই নেলকাটার দিয়ে সবাই নখ কাটার ফলে তা থেকে জীবাণু ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রয়োজনে অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে তারপরে ব্যবহার করতে হবে। 

নখ কাটার সময় তাড়াহুড়ো করালে 

অনেক সময় খুব তাড়াহুড়ো করে নখ কাটতে গিয়ে আঙুল কেটে ফেলি। এতে রক্তপাত হয়ে ব্যাথা ও ইনফেকশন হতে পারে। তাই নখ কাটার সময় কখনোই তাড়াহুড়ো করা যাবেনা। 

নখের কিউটিকল কেটে ফেলা 

কিউটিকল আমাদের নখের শিকড়কে সুরক্ষা দেয়। অর্থাৎ এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে আমাদের নখ রক্ষা করে। তাই নখ কাটার সময় কিউটিকল যেনো কেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

নখ পালিশ করার আগে কি বাফ করা উচিত?

নখ পালিশ করার আগে কি বাফ করা উচিত?

আমাদের হাতের নখকে সুন্দর ও চকচক দেখানোর জন্য একধরনের বাফিং ব্যবহার করা হয়। নখ পালিশ করার আগে বাফ করা উচিত। নখ বাফ করলে নখের পৃষ্ঠ মসৃণ হয় এবং পালিশ ভালোভাবে লেগে থাকে। এছাড়াও নখের ওপর থাকা ময়লা, তেল এবং অসমান জায়গাগুলোও সাফ হয়ে যায়। ফলে নখ পালিশের বেশিদিন স্থায়ী থাকে এবং নখকে সুন্দর, উজ্জ্বল দেখায়। তবে, অতিরিক্ত বাফ করা উচিত নয়, কারণ এতে নখের পুরুত্ব কমে যেতে পারে। সপ্তাহে এক-দুইবার বাফ করা যথেষ্ট।

নখ পালিশ করার পর সাধারণত বাফ করা উচিত নয়।কারণ, পালিশ হয়ে করার পরে নখে যে শাইন বা চকচকে ফিনিশ আসে।  পরবর্তীতে আবারও বাফ করার ফলে পালিশের শাইন কমে যেতে পারে । তবে, যদি বেশি শাইন বা গ্লস চান, তখন খুবই নরম বাফার ব্যবহার করতে পারেন খুব হালকা হাতেই, তবে অতিরিক্ত নয়। কিছু বিশেষ ধরনের বাফিং পেড বা শাইন বাফার রয়েছে, যা পালিশের উপর হালকা গ্লস লেয়ার অ্যাড করতে সাহায্য করে।  

দুর্বল নখ কাটা ভালো নাকি ফাইল করা ভালো?

দুর্বল নখের যত্ন কাটার চেয়ে নখ ফাইল করা ভালো। কারণ অনেক সময় দুর্বল নখ কাটতে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে ভাঙন বা ফাটার ঝুঁকি থাকে। তবে নখ ফাইল করার কিছু নিয়ম আমাদের মাথায় রাখতে হবে। চলুন নিয়মগুলো জেনে নেওয়া যাক- 

নরম ফাইল ব্যবহার করুন – যাদের নখ দুর্বল তারা অবশ্যই নরম ফাইল ব্যবহার করবেন। কারণ খুব বেশি রুক্ষ ফাইল ব্যবহারের ফলে  আমাদের নখ আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

একদিক দিয়ে ফাইল করুন – নখ ফাইল করার সময় একদিকে ধীরে ধীরে ফাইল করা ভালো, কারণ এভাবে ফাইল করলে নখের প্রান্ত মসৃণ থাকে এবং চিড় ধরার সম্ভাবনা কমে।

শুকনো নখ ফাইল করবেন না – নখ ফাইল করার আগে আমাদের নখ যেনো শুকনো না থাকে সেদিকটি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ শুকনো নখ সহজে ফাইল হতে চায়না। তাই নখ সামান্য ভিজিয়ে নিতে হবে। অথবা গোসলের পর নখ ফাইল করা যেতে পারে। এতে নখ তুলনামূলকভাবে নরম থাকে।

গোলাকার বা স্কোয়ালেট আকার দিন – দুর্বল নখের আকৃতি গোলাকার বা স্কোয়ালেট (স্কোয়ারের মতো কিন্তু মসৃণ কোণা) দিতে হবে। এতে নখের প্রান্তে ভাঙন কমায়।

আমরা অনেকেই দ্রুত নখ বড় করার উপায় জানতে চাই। যদি আপনার নখ খুব বেশি দুর্বল হয়, তবে নখ মজবুত করার জন্য বিভিন্ন পণ্য বা নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে দুর্বল নখের আর্দ্রতা বেড়ে যায়। ফলে আমাদের  নখ মজবুত হয় সেই সাথে দ্রুত নখ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কীভাবে নখ কাটা উচিত

নেইল বাফ কি ও এর কাজ

অনেকে বিভিন্ন বিউটি পাল্লার বা সেলুনে গিয়ে হাতের পায়ের যত্নে নেওয়ার জন্য ম্যানিকিউর করে থাকেন। ম্যানিকিউর করার জন্য বিভিন্ন টুল রয়েছে। এরমধ্যে নেইল বাফ টুলটি অন্যতম। এটি আমাদের নখের পৃষ্টকে মসৃণ ও শাইন করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ নেইল বাফ একটি সহজ এবং কার্যকর টুল, যা নখের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।চলুন নেইল বাফের কাজ জেনে নেওয়া যাক-  

নখের পৃষ্ঠ মসৃণ করা: নখের ওপরে থাকা খসখসে জায়গাগুলোকে সমান করতে ব্যবহার করা হয়। 

নখে প্রাকৃতিক শাইন আনা: আমদের নখের প্রাকৃতিক শাইন ফিরিয়ে আন এবং চকচক ও উজ্জ্বল দেখায়। 

পালিশের জন্য নখ প্রস্তুত করাঃনেইল পলিশ করারর আগে নেইফ বাফ করা হয়। এতে করে নেইল পলিশ নখে ভালোভাবে বসে এবং নেইল পলিশের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। 

নখের দাগ সরানো: অনেক সময় আমাদের নখে হলদেটে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এই হলদে দাগ দূর করতে নেইলস  বাফ করা হয়। 

বাফ করার নিয়ম:

  • নখ পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন।
  • নেইল বাফ দিয়ে হালকা হাতে নখের ওপর বাফ করুন।
  • অতিরিক্ত চাপ দেবেন না, কারণ এতে নখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • প্রতিবার বাফ করার পর বাফার পরিষ্কার করে রাখুন।
  • নখ বাফ করার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ নখ অতিরিক্ত বাফ করার কারণে এতে নখ পাতলা ও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সপ্তাহে একবার নখ বাফ করা যেতে পারে।  

নখ আমাদের শরীরের  একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমরা হাত দিয়ে খাবার খাই। যদি নখ পরিষ্কার না থাকে তাহলে নখ থেকে জীবাণু আমাদের শরীরের প্রবেশ করে। এবং বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ দেখা যায়। আমরা হয়তো অনেকেই এই বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেইনা। হয়তো অনেকের অজানা, সঠিকভাবে নখ না কাটার কারণে ইনগ্রোন নেলস হ্যাঙ্গনেলস, ওনিকোলাইসিস ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে দাঁত দিয়ে নখ কাটার কারণে নখের ক্ষতি হয়। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নখের প্রতি যত্নশীল হওয়া। শুধু হাতের নখ নয় পায়ের নখের প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। 

নখ কাটার ক্ষেত্রে ৫ টি বিশেষ টিপস ও সতর্কতা  


নখ কাটার সময় কিছু বিষয়গুলো মেনে চললে নখ নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হবেনা। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

  • নখের আর্দ্রতা হারিয়ে নখ শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার একটি কারণ হলো নখ ট্রিম করালে বা কাটলে। তাই নখ কাটার পরে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার হাতে লাগিয়ে নিতে হবে। ফলে নখের আর্দ্রতা ঠিক থাকে। 
  •  অনেকেই আছেন যারা বড় নখ পছন্দ করেননা। সেক্ষেত্রে খুব বেশি নখ ছোট না করে  মাঝারির চেয়ে ছোট এমন দৈর্ঘ্য পর্যন্ত রেখে নখ কাটা যেতে পারে। কারণ অনেক সময় একেবারে ছোট নখ করার ফলে নখের নিচের চামড়া বেড়িয়ে যায়। এতে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • নখ ফাটা নিয়ে অনেকেই সমস্য পরে যান। বিশেষ করে যারা নখ একটু বড় রাখতে পছন্দ করেন। তারা এই নখ ফাটা দিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় থাকেন। নখ ফেটে গেলে নখ বড় রাখা যায় না। ফলে কেটে ফেলতে হবে। মূলত নখ আমাদের শরীরের এক ধরনের ফাইবারযুক্ত টিস্যু। তাই সহজেই নখ ফেটে যায়। এবং নখ দুর্বল করে ভঙ্গুর করে দেয়। 
  • নখ কাটার সময় এর আকৃতির ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে। অনেকেই বাদামের মতো খোঁচা করে কেটে থাকেন। ফলে নখ আরও দুর্বল হয়ে যায়। তাই গোলাকারভাবে নখ কাটতে হবে।  
  • অনেকের হাতের নখ অনেক শক্ত হয়ে যায়। শক্ত নখ কাটার একটু কষ্টকর হয়ে যায়। তাই নখ কাটার সময় কিছুক্ষন পানির মধ্যে রাখতে হবে। এতে সহজে কাটার মতো উপযুক্ত হবে। 

অনেকেরই দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস রয়েছে। অনেকে আবার ভয়ে বা মানসিক চাপে থাকার কারণে দাঁত দিয়ে নখ কাটেন। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এমনকি বিশেষজ্ঞরও জানিয়েছেন, দাঁত দিয়ে নখ কাটার বদ অভ্যাস আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কি এবার বুঝতে পেরেছেন তো নখ কাটা কি ক্ষতিকর নাকি ভুল নিয়মে নখ কাটা ক্ষতিকর?