সানস্ক্রিন হলো একটি ত্বক সুরক্ষা পণ্য যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। সূর্যের ইউভি (UV) রশ্মি ত্বকের ক্যান্সার, ত্বক পুড়ে যাওয়া, এবং ত্বকের বার্ধক্য সহ অন্যান্য সমস্যার লক্ষণ সৃষ্টি করে। এই সকল সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সানস্ক্রিন দুই প্রকারে বিভক্ত করা যেতে পারে যথা: ফিজিক্যাল এবং কেমিক্যাল। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনে সাধারণত টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড বা জিঙ্ক অক্সাইড থাকে, যা সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করে ত্বককে রক্ষা করে।
এটি সাধারণত সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযুক্ত। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে যেমন অক্সিবেনজোন বা স্যালিসিলেট, যা সূর্যের রশ্মি শোষণ করে এবং ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দেয়। আমাদের আজকের লেখায় আমরা কোন সানস্ক্রিন ত্বক কালো করে না এবং কোন সানস্ক্রিন সবচেয়ে ভালো ফিজিক্যাল নাকি কেমিক্যাল? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
সানস্ক্রিন ফিজিক্যাল নাকি কেমিক্যাল কোনটি ভালো?
সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর UV রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, যা ত্বকের বয়স বাড়ানোর প্রধান কারণ। সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচনের জন্য দুটি সানস্ক্রিন যথাঃ ফিজিক্যাল (বিকিরণ প্রতিরোধক) এবং কেমিক্যাল (রাসায়নিক) উভয়ই বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। আজ আমরা ফিজিক্যাল এবং কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের মধ্যে পার্থক্য, সুবিধা, এবং অসুবিধাগুলি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যা আপনাকে আপনার ত্বকের জন্য সঠিক সানস্ক্রিন বাছাই করতে সাহায্য করবে।
ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ত্বক সুরক্ষা পণ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি (UV) রশ্মি থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড এবং জিঙ্ক অক্সাইড মাধ্যমে কাজ করে। এই পণ্যগুলির ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ত্বকের সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তবে, ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের কিছু অসুবিধাও রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের মনে রাখা উচিত।
বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাসমূহ:
- প্রাকৃতিক উপাদান: ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনে সাধারণত টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড এবং জিঙ্ক অক্সাইড থাকে। এই উপাদানগুলো সূর্যের ইউভি (UV) রশ্মির প্রতিফলন করে, ত্বকের উপর একটি প্রাকৃতিক বাধা তৈরি করে। এতে রাসায়নিক উপাদান কম থাকায় ত্বকের তেমন কোন ক্ষতি করে না।
- শারীরিক প্রতিরোধ: এই সানস্ক্রিন ত্বকে একটি শারীরিক স্তর তৈরি করে, যা সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করে। এটি রাসায়নিক বিক্রিয়া না ঘটিয়ে সরাসরি রশ্মি প্রতিরোধ করে। ফলে, এটি সাধারণত ত্বকে কম সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
- প্রাকৃতিক ফিনিশ: ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন হালকা এবং স্বাভাবিক স্বস্তি প্রদান করে। এটি ত্বকে সাদা বা লাল ভাব ছড়ায় না এবং মসৃণ ও প্রাকৃতিক চেহারা দেয়।
- স্থায়িত্ব: ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী থাকে। কারণ এটি সূর্যের রশ্মির সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না। পাশাপাশি এর স্থায়িত্ব অনেকক্ষণ দীর্ঘ হয় যে কারণে বারবার ব্যবহার করার প্রয়োজন পরে না।
সানস্ক্রিন আর সানব্লক কি এক ও মুখ থেকে দূর করার উপায়
অসুবিধা:
- সাদা ভাব: কিছু ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনে সাদা ভাব থাকতে পারে যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙের সাথে মেলেনা। বিশেষ করে ত্বকের কালো দাগ বা স্বাভাবিক ত্বকের রঙের ক্ষেত্রে এটি দেখা যেতে পারে।
- ঘনত্ব: ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন কিছু ক্ষেত্রে ঘন এবং পুরু বা মোটা হতে পারে, যা ত্বকে একটি ভারী অনুভূতি দিয়ে থাকে। এটি বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময় বা উষ্ণ আবহাওয়ায় অস্বস্তিকর।
- মূল্য: কিছু ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের দাম অন্যান্য সানস্ক্রিনের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। উচ্চমূল্যের কারণে এটি সব রকম মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
- অপসারণ: ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ত্বক থেকে সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা কিছুটা কঠিন। এটি সাধারণত মেকআপ রিমুভার বা বিশেষ ক্লিনজারের সাহায্যে পরিষ্কার করা উচিত, যা অতিরিক্ত পরিশ্রমের প্রয়োজন এবং সময় সাপেক্ষ হতে পারে।
কেমিক্যাল সানস্ক্রিন: বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
কেমিক্যাল সানস্ক্রিন বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যেমন অক্সিবেনজোন, অক্টোক্রিলিন, হোমোস্যালেট, ও অক্টিনোক্সেট দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। এই রাসায়নিকগুলি ত্বকে শোষিত হয়ে UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দেয়।
বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাসমূহ:
- হালকা ফর্মুলা: কেমিক্যাল সানস্ক্রিন সাধারণত হালকা ও স্নিগ্ধ হয় এবং ত্বকে দ্রুত শোষিত হয়, যা ত্বকের উপর ভারী অনুভূতি সৃষ্টি করে না।
- অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা: কেমিক্যাল সানস্ক্রিন UV রশ্মি শোষণ করে তাদের ক্ষতিকর প্রভাব কমায় এবং ত্বকের গভীরে কাজ করে।
- ব্যবহারে সহজ: এই সানস্ক্রিন সাধারণত ত্বকে সহজে মিশে যায় এবং কোনো সাদা ভাব রেখে যায় না।
- বিভিন্ন ফর্মুলা উপলব্ধ: কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের অনেক ধরনের ফর্মুলা পাওয়া যায়, যেমন পাউডার, স্প্রে, ক্রিম, যা বিভিন্ন প্রকারের ত্বকের জন্য উপযুক্ত।
অসুবিধা:
- কর্মক্ষমতা: কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা কিছুটা সময় নিতে পারে এবং এটি ত্বক থেকে শোষিত হয়, তাই এটি সবসময় ত্বকের জন্য উপযুক্ত নই।
- প্রতিক্রিয়া ও অ্যালার্জি: কিছু কেমিক্যাল উপাদান ত্বকে অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে।
কোন সানস্ক্রিন ত্বক কালো করে না?
ত্বক কালো না করার জন্য সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, ত্বক কালো করে না এমন সানস্ক্রিনের উপাদানগুলি মধ্যে রয়েছে অক্সিবেনজোন, অক্টিসালেট এবং টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড উল্লেখযোগ্য। এগুলো ত্বকে সাদা দাগ বা জেলি ভাব না এনে প্রাকৃতিক গায়ের রঙের সাথে মিশে যায়।
বিশেষত, মিনারেল সানস্ক্রিন বা শিতের সানস্ক্রিন টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড বা জিঙ্ক অক্সাইড দ্বারা তৈরি, যা ত্বক কালো করার সমস্যা কমিয়ে দেয়। এই ধরনের সানস্ক্রিন স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সাথে ভালভাবে মিশে যায় এবং ত্বকে কোনো রকম অবাঞ্ছিত দাগ রাখে না।
এছাড়া, অয়েল-ফ্রি এবং লাইটওয়েট ফর্মুলা সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকের উপর লোড কমবে এবং ত্বক চটচটে বা ভারী মনে হবে না, যা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। সুতরাং, সানস্ক্রিন কেনার সময় মিনারেল ফর্মুলা এবং লাইটওয়েট পণ্যগুলি বেছে নিন যাতে ত্বক কালো না হয় এবং প্রাকৃতিক রঙ ঠিক থাকে।
রাতে কি মুখে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত?

রাতে মুখে সানস্ক্রিন লাগানোর প্রয়োজন নেই কারণ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি রাতে ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে না। সানস্ক্রিন মূলত দিনের বেলা সূর্যের UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। রাতে, ত্বককে বিশ্রাম ও পুনগঠনের জন্য সুযোগ দিতে হয়। সানস্ক্রিনের রাসায়নিক উপাদানগুলো ত্বকে অবশিষ্ট থাকলে এটি ত্বকের স্বাভাবিক পুনর্জন্ম প্রক্রিয়াকে বাঁধা প্রদান করতে পারে। তাই রাতে মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার বা নাইট ক্রিম ব্যবহার করা উচিত, যা ত্বককে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে। অতএব, রাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
সানস্ক্রিন না ধুলে কি হয়?
সানস্ক্রিন না ধুলে ত্বকে জমে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলি লোমকূপ ব্লক করে দেয়। এতে ত্বকে অতিরিক্ত ব্রণ, পিম্পল বা নানা ধরনের ত্বকের সমস্যা তৈরি হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সানস্ক্রিন অবশিষ্ট থাকলে ত্বক বন্ধ হয়ে যায় এবং ত্বকের স্বাভাবিক পুনর্জন্ম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। এটি ত্বকের পোর বা ছিদ্র বন্ধ করে, ত্বককে শুষ্ক এবং অস্বস্তিকর করে তোলে। পাশাপাশি, সানস্ক্রিনের রাসায়নিক উপাদানগুলি ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে সূর্যের অতিরিক্ত রশ্মি থেকে সুরক্ষা কমে যায়। সুতরাং, সানস্ক্রিন ব্যবহারের পর ত্বক ভালোভাবে ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফিজিক্যাল নাকি কেমিক্যাল সানস্ক্রিন: কোনটি নির্বাচন করবেন?
সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার ত্বকের প্রকার, প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
- সংবেদনশীল ত্বক: যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয় এবং রাসায়নিক উপাদানের প্রতি প্রতিক্রিয়া থাকে, তাহলে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
- বিভিন্ন আবহাওয়ার পরিস্থিতি: ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন গ্রীষ্মকালীন তাপ এবং আর্দ্রতায় ভাল কাজ করে, তবে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন সাধারণত দীর্ঘসময় ধরে কার্যকর থাকে।
- স্বাস্থ্য ও পরিবেশ: যদি আপনি পরিবেশগত কারণে সচেতন হন, তবে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো, কারণ এটি পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে।
- ব্যবহারিক সুবিধা: যদি আপনি একটি হালকা এবং ত্বকে সহজে মিশে যাওয়া সানস্ক্রিন চান, তাহলে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
উপসংহার
কোন সানস্ক্রিন ত্বক কালো করে না এবং ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের মধ্যে কি সব ধরনের সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে? আপনার ত্বকের ধরন, জীবনযাপন,এবং ব্যক্তিগত পছন্দের উপর ভিত্তি করে সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন করা উচিত। সানস্ক্রিনের উপযুক্ত ব্যবহার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে, এবং ত্বকের স্বাস্থ্য সাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে হলে আপনার ত্বকের প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবে বুঝতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী সানস্ক্রিনের প্রকার নির্বাচন করা করা উচিৎ।