You are currently viewing চুলে তেল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম, ভেজা চুলে তেল দেওয়া যাবে কি ?
ভেজা চুলে তেল

চুলে তেল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম, ভেজা চুলে তেল দেওয়া যাবে কি ?

তেল হলো চুলের প্রধান খাদ্য। বাজারে বিভিন্ন ধরনের তেল রয়েছে। একেক তেলের রয়েছে একেক গুন। আবার অনেকে বাসায় ভেষজ তেল তৈরি করে চুলে ব্যবহার করে থাকে। তেল এর মধ্যে যেমন অনেক ধরণ আছে তেমনি এর ব্যবহারবিধি ও অনেক রকমের হয়ে থাকে। একেকজন একেক রকমভাবে তেল ব্যবহার করে থাকে। আসুন জেনে নেই সঠিকভাবে তেল ব্যবহারের নিয়ম প্রণালি।

ভেজা চুলে তেল দেওয়া যাবে কি ?

চুলে খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করতে তেলের ব্যবহার ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। তাই অনেকেই আছেন যারা তেল ব্যবহারের ব্যাপারে খুবই পজেসিভ। তারা এটা মনে করে দেন যে চুলে তেল ব্যবহার করলেই চুল ভালো থাকবে। সঠিক কোনো নিয়ম নীতি নাই। তাই  অনেকেই আছেন যারা ভেজা চুলে তেল লাগাতে অভ্যস্ত। আসলে ভেজা চুলে কি আদৌ তেল লাগানো উচিত? এবার আসুন জেনে নেই –

না, ভেজা চুলে তেল লাগানো একদমই উচিত না। আপনারা কখনও এই ভুলটি করবেন না। কারণ ভেজা চুলের ফলিকল খুব নরম হয়, সামান্য একটু  টানা-হেঁচড়াতেই চুল পড়তে পারে।  তাই চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আগে তা অবশ্যই শুকিয়ে নিন, তার পর তেল মাখবেন। এতে আপনার চুল ও চুলের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। তাই চেষ্টা করা উচিত ভেজা চুলে তেল লাগানো এড়িয়ে চলার।

প্রতিদিন চুলে তেল কেন লাগাবেন ?

চুলে তেল দেওয়ার অভ্যাস কম বেশি সবারই থাকা উচিত। চুলের স্বাস্থ্যমান বজায় রাখা ও ন্যাচারাল গ্রোথ এর জন্য চুলে প্রতিদিন নিয়মিত তেল ব্যবহার অনেক জরুরি। প্রতিদিন চুলে তেল কেন লাগাবেন? চলুন জেনে নিই-

ভেজা চুলে তেল

চুলকে মসৃণ করতে

চুল মসৃণ করার একটি বড় উপায় হলো চুলে প্রতিদিন তেল ব্যবহার করা। চুলে তেল দিলে তা স্কাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় । এতে চুল মসৃণ ও ঝলমলে হয়।

অকালে চুল পাকা থেকে রক্ষা করে

প্রতিদিন চুলে তেল দিলে বুড়ো বয়সের আগে চুল পাকা প্রতিরোধ হয়, অর্থাৎ অকালে চুল পাকা রোধ হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রতিদিন তেল দেওয়া চুলকে  মজবুত ও স্বাস্থ্যকর করে। 

চুলে শুষ্কতা প্রতিরোধ করে

নিয়মিত হেয়ার স্পা করলে  চুলের শুষ্কতা কমায়। আর নিয়মিত চুলে তেল দিলে চুল পুষ্টি উপাদান পায়। যদি আপনার চুল খুব শুষ্ক হয়,তাহলে চুলে তেল মাখুন। একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে এরপর তোয়ালে থেকে পানি ঝরিয়ে চুলে পেঁচিয়ে নিন। এতে করে তেল ভালোভাবে স্কাল্পে প্রবেশ করবে এবং শুষ্কতা কমবে।

দূষণ থেকে মুক্তি দেয়

আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না, প্রতিদিন চুলে তেল দিলে দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমরা তো প্রতিদিনই মুখ ধুই। তবে প্রতিদিন কি চুল পরিষ্কার করে ধুতে পারি?তেল চুলের উপরিভাগে একটি লেয়ার তৈরি করে। উক্ত লেয়ারে ধুলা, ময়লা, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুলকে নিরাপদে রাখা যায়। তাই চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহার করা অনেক প্রয়োজন। 

কোন সময় চুলে তেল দেওয়া উচিত?

আপনি যে কোনো সময় তেল দিতে পারবেন তবে তেল শুধু চুলে না মাথার ত্বকেও দিতে হবে।

  • আপনি যদি চুলে তেল থাকা অবস্থায় বাইরে যেতে চান তাহলে শুধুমাত্র  নারিকেল তেল ব্যবহার করবেন।
  • একদিন পরপর অথবা অন্তত সপ্তাহে তিনদিন ক্যাস্টর ওয়েল এর সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে। এরপর মাথায় ম্যাসাজ করে নিবেন। তারপর মাথার ত্বকে আলতো হাতে তেল লাগিয়ে নেবেন, খেয়াল রাখবেন তেল যেন খুব গরম না থাকে।
  • কখনোই খুব চাপ দিয়ে মাথায় তেল বা শ্যাম্পু কোনোটাই ম্যাসাজ করবেন না এতে আপনার চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে ভেঙে পরবে।
  • ক্যাস্টর অয়েল ১ চা চামচ আর কোকোনাট অয়েল ২ চা চামচ একসাথে নেবেন।
  • আপনি চাইলে সারা রাত এই তেল চুলে রাখতে পারেন অথবা ২-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে ভালো করে শ্যাম্পু করে নেবেন। যখনই শ্যাম্পু করবেন খেয়াল রাখবেন মাথার ত্বকে যেন তেল না থাকে। ত্বকে সামান্য তেল থেকে গেলে তাতে ময়লা জমে যাবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি তখন চুল পড়া বেড়ে যাবে। তাই যখনই শ্যাম্পু করবেন খুব ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করবেন।
  • যাদের মাথার ত্বক তৈলাক্ত অথবা মাথা খুব বেশি ঘামে তাদের সবসময় মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে হয় তা না হলে চুল পড়ে যায়। আপনার মাথার ত্বক আর চুলের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

চুলে তেল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

নিয়মিত চুলে তেল দেওয়ার অভ্যাস আপনাকে দিতে পারে সুন্দর ও কোমল চুল। কিন্তু তার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে চুলে তেল দেওয়ার সঠিক উপায়। আসুন জেনে নেই কীভাবে আপনার চুলে সঠিকভাবে তেল দিবেন। 

  • ক্যাস্টর অয়েল ও  নারকেল তেলের মতো শীতকালীন তেলগুলি সাধারণত হালকা ঘন হয়, তাই এগুলিকে কিছুটা গরম করলে তেল মাথার ত্বকে খুব সহজে প্রবেশ করে এবং সহজেই শুষে নেয়।
  • মাথার চুলের সামনের অংশের পার্টিশন তৈরি করুন এবং আঙুলের ডগা ব্যবহার করে মাথার ত্বকে তেল লাগান, তারপরে মাথার ত্বকে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন।
  • পুরো মাথার ত্বকের জন্য একই কাজ  বেশ কয়েকবার করে করুন। চুলের বিভাজন মাথার ত্বকে তেল দেওয়ার জন্য আরও ভাল উপায় তৈরি করে দেয়। এবার  পুরো মাথার ত্বকে তেল লাগিয়ে নিন।
  • ত্বকে আস্তে আস্তে খুব আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন,মনে রাখবেন কখনোই বেশি ঘষবেন না।
  • এরপর আরও কিছু তেল নিয়ে চুলে লাগাতে থাকেন। হাত দিয়ে চুলে সব তেল মেখে নিন।

তেল দেওয়ার পর চুল পড়ে কেন?

অনেকেই  বলেন, চুলে তেল দেওয়ার কারণে চুল পড়ে যায়। আসলেই কি তাই ? তবে, সবকিছুরই একটা নিয়ম থাকে। যেটা না মানলে এমন বিপত্তি ঘটা স্বাভাবিক। ভুলভালভাবে চুলে তেল দিলে চুল পড়ে যেতেই পারে। তাই চুলে পুষ্টি যোগাতে সঠিক উপায়ে তেল দেওয়ার নিয়মগুলো জেনে তারপর তেল দিতে হবে।  

ভেজা চুলে তেল

অতিরিক্ত তেল লাগালে

চুলে অতিরিক্ত তেল দিলে মাথার ত্বকের ছিদ্রে ময়লা আটকে যেতে পারে। তাই সপ্তাহে দুবার চুলে তেল লাগান। ৩-৪ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

দীর্ঘদিন তেল লাগিয়ে রাখবেন না

দীর্ঘদিন মাথার ত্বকে তেল লাগিয়ে রাখলে মাথার ত্বকের ছিদ্র গুলো ব্লক হয়ে যেতে পারে। এতে আপনার মাথার ত্বকে ব্রণ, ফুসফুড়ি দেখা দিবে এবং চুল পরবে।

জোরে ঘষাঘষি করা থেকে বিরত থাকুন

চুলে তেল দেওয়ার সময় অনেকেই মাথার ত্বক এবং চুল খুব জোরে জোরে ঘষে থাকেন। এতে মাথার ত্বক এবং চুলের ফলিকলের ক্ষতি হয় এবং চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তেল দেওয়ার পর চুল আঁচড়ানো

তেল মালিশ করার পর মাথার ত্বক অনেকটা নরম হয়ে যায়। তাই তেল দেওয়ার পর চুল আঁচড়ালে চুল পড়ার ঝুঁকি থাকে। চুলের ফলিকল এবং মাথার ত্বকে চাপ পড়ে।

ভালো মানের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন 

চুলকে ময়েশ্চারাইজ করার জন্য ভালো মানের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। চুলের জন্য ক্ষতিকারক এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল দ্রুত ঝরে যাবে।

কন্ডিশনার ব্যবহার করুন

তেল এবং শ্যাম্পু করার পর অনেকেই চুলে কন্ডিশনিং করেন না। কন্ডিশনার চুলে আর্দ্রতা এবং পুষ্টি যোগায়। তাই এটি এড়িয়ে যাওয়া ঠিক না। 

কথায় আছে যত্ন নিলে রত্ন মিলে! সেটা যেকোনো কিছুই হোক সঠিক যত্নে আপনার কাঙ্ক্ষিত কিছু পাবেন। তাই আপনার উচিত ভেজা চুল হোক বা শুকনো চুল হোক যথাযথ যত্নই পারে আপনার চুলকে প্রাণবন্ত ও সুন্দর করতে। আশা করি উপরিউক্ত টিপস গুলা আপনার কাজে লাগবে।   

Leave a Reply