মেয়েদের সাজগোজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তাদের মাথার চুলের স্টাইল করা। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে চুলের স্টাইল করার তেমন সময় না হলেও পনিটেল আর হাই বান স্টাইল যেন সবাই করে থাকে। ফলে ওই একই পনিটেল আর হাই বান ছাড়া অন্য কোনো হেয়ারস্টাইল করার সময়ও তেমন হয়ে ওঠে না। তাই বলে প্রতিদিনই তো আর একই স্টাইলে চুল বাঁধা যায় না।
এই একঘেয়েমি কাটানোর জন্য এবং চেহারাতে একটা আলাদা নতুনত্ব ভাব আনতে আজ এমন কয়েকটি সহজ চুল বাধার স্টাইল আপনাদের সাথে শেয়ার করব যেগুলো আপনি খুব সহজে একাই ঘরে বসে করে নিতে পারবেন। তাহলে আসুন দেখে নেই খুব সহজেই আপনার চুলে কি কি স্টাইল করতে পারবেন এবং কোন হেয়ার স্টাইলটি আপনাকে ভাল মানাবে –
মেয়েদের জনপ্রিয় হেয়ার স্টাইল গুলো কি কি?
মেয়েদের জন্য কিছু হেয়ার স্টাইল আছে যেগুলা অনেক জনপ্রিয়। আসুন সেগুলো জেনে নেই-

ফ্রেঞ্চ বেণী
কোঁকড়া কিংবা সোজা যে কোনো চুলেই বেশ ভালো মানায় ফ্রেঞ্চ বেণী। সবার থেকে আলাদা লুক পেতে একটু আলাদা স্টাইল যদি বিবেচনা করে থাকেন। তাহলে অবশ্যই ফ্রেঞ্চ বেণী করার চেষ্টা করতে পারেন। ভীষণ আকর্ষণীয় একটা লুক আনে এই চুলের স্টাইল টি। আর এই স্টাইলটি এত চমৎকার যে এভাবে চুল বেঁধে রাতে ঘুমালে সকালে ওঠার পর ও হেয়ার স্টাইল ঠিক সেরকমই থেকে যায় এলোমেলো হয় না। তাই লম্বা ট্র্যাভেল করার ক্ষেত্রে এই হেয়ারস্টাইল টি সবথেকে ভালো উপায়।
সাইড ব্রেড
সাইডে সিঁথি করে চুল আঁচড়ান এবার যে দিকে সিঁথি করেছেন, তার উল্টো দিকে চুল দিয়ে একটা ছোট্টো বিনুনি করে সেটা ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন। চাইলে অনেকগুলো ছোট-ছোট বিনুনি করে সেগুলো একসঙ্গে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিতে পারেন। যাদের একটু লম্বা চুল তারা বাকি চুল গুলো বেঁধে কিংবা সাধারন বান বানিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার চেহারার ধরন পাল্টে যাবে আর আকর্ষণীয় দেখতে লাগবে।
মাঝখানে সিঁথি কেটে হেয়ারস্টাইল
আজকাল এই হেয়ারস্টাইল টি ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়। খুবই সহজ একটা হেয়ার স্টাইল এটি। আর সব ধরনের চুলেই এটি দারুণ আকর্ষণীয় একটা লুক তৈরী করে। মাঝখানে সিঁথি কেটে হাই অথবা লো পনিটেল করতে পারেন, দেখতে সুন্দর লাগবে।
রোপ ব্রেড বান
এই হেয়ারস্টাইলটি দেখতে অনেকটা দড়ির মতো হয়। প্রথমে ভালো করে ব্যাক কোম্ব করে নিন। এবার মাথার মাঝখান থেকে অল্প চুল নিয়ে বিনুনি করে সেটা পেঁচিয়ে বেঁধে নিন। এরপর বাকি যে পরিমাণ চুল আছে, সেখান থেকেও কিছু চুল নিয়ে আবার পুনরায় একটা বিনুনি করে পেঁচিয়ে বেঁধে নিন।
এভাবে তিন চারটে বিনুনি করে বেঁধে নিন। এবার প্রথম বিনুনি গুটিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন। তার নীচে দ্বিতীয় এবং তার নীচে তৃতীয় বিনুনি আটকে গুটিয়ে দিন। এদিক ওদিক থেকে যদি সামান্য চুল বেরিয়ে আসে, তা হলে সেটা দেখতে ভালোই লাগে।
বিচ ওয়েভ
বিচ ওয়েভ এর মতো জনপ্রিয় চুলের স্টাইল এমন মহিলাদের জন্য আদর্শ যারা সহজ এবং অনায়াসে চুলের ঢেউ ঢেউ ভাব দেখতে চান। আপনি কার্লিং আয়রন ব্যবহার করে বা ভেজা চুল বেঁধে এবং বাতাসে শুকিয়ে দিয়ে এই চেহারা তৈরি করতে পারেন। চুল শুকিয়ে গেলে বিনুনিগুলো খুলে ফেলুন এবং আঙুলে আঙুল দিয়ে আঁচড়ান যাতে এটি তরঙ্গায়িত হয়। একটি ফুল বা অন্যান্য চুল প্রসাধন সঙ্গে, বিচ ওয়েভ একটি কেন্দ্র বা পার্শ্ব অংশ সঙ্গে স্টাইল করা যেতে পারে।
চুলের কার্ল
প্রাকৃতিকভাবে কোঁকড়ানো চুলের মহিলাদের জন্য কর্মের সর্বোত্তম কোর্স হল তার চুলের কার্লগুলিকে আলিঙ্গন করা। প্রবাহিত তরঙ্গ থেকে আঁটসাঁট সর্পিল পর্যন্ত, বিভিন্ন ধরণের কার্ল রয়েছে এবং প্রতিটি প্রকারের জন্য আলাদা স্টাইলিং কৌশল প্রয়োজন। যদিও কিছু মহিলা কার্লিং ক্রিম বা মাউস ব্যবহার করে তাদের কার্লগুলিকে আকৃতি দিতে পছন্দ করেন, অন্যরা তাদের কার্লগুলি ঢিলেঢালা এবং এলোমেলোভাবে পরতে পছন্দ করেন।
সোজা চুল
একটি ঐতিহ্যবাহী এবং নিরবধি চুলের স্টাইল যা কখনও স্টাইলের বাইরে যায় না তা হল সোজা চুল। এই হেয়ারস্টাইলটি একটি কেন্দ্র বা পাশের অংশের সাথে পরিধান করা যেতে পারে। এই স্টাইলটি একটি ফ্ল্যাট আয়রন বা ব্লো ড্রায়ার দিয়ে তৈরি করা সহজ হয় । একটি সোজা কিন্তু আড়ম্বরপূর্ণ শৈলীর জন্য, সোজা চুল একটি হেডব্যান্ড বা চুলের ক্লিপ এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে।
আপডো স্টাইল
যে মহিলারা আরও আনুষ্ঠানিক চেহারা পছন্দ করেন, তাদের জন্য আপডো একটি জনপ্রিয় হেয়ারস্টাইল। ঐতিহ্যবাহী বান, ব্রেইডেড আপডো এবং স্লোপি বান সহ বিভিন্ন ধরণের আপডো রয়েছে। এটির সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য, আপডোগুলি ফুল, হেয়ারপিন বা অন্যান্য আইটেম দিয়ে সাজানো যেতে পারে।
ক্লাসিক বান
ক্লাসিক বান যেটা ঐতিহ্যবাহী বান নামে পরিচিত। এই বান হলো একটি আকর্ষণীয় কিন্তু অসম্পূর্ণ হেয়ারস্টাইল যা আনুষ্ঠানিক যেকোনো সাজের জন্য আদর্শ। এই স্টাইলটি পেতে চুলগুলিকে জড়ো করা উচিত এবং ঘাড়ের নুড়িতে একটি বানে পেঁচানো উচিত। বানটি জায়গায় রাখতে, ববি পিন এবং হেয়ার স্প্রে দিয়ে বেঁধে দিন।
ব্রেইড আপডো
একটি সুন্দর হেয়ারস্টাইল যা বিবাহ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের জন্য আদর্শ হল এই ব্রেইড আপডো। এই চেহারা পাওয়ার জন্য, চুলগুলিকে মুকুটের আকারে বিনুনি করা হয় এবং ববি পিন দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়। একটি আকর্ষণীয় লুকের জন্য, এই হেয়ারস্টাইল এ ফুল বা অন্যান্য সাজ সরঞ্জাম ব্যবহার করলে এর সৌন্দর্য গুন আরো বেড়ে যায়।
কোন চুলে কোন হেয়ার স্টাইল ভালো মানায়
চুলের স্টাইলের ক্ষেত্রে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে আপনার চুল কি ধরণের আর কোন স্টাইল আপনার মুখের গঠনের সাথে যাবে। এছাড়াও শুধু চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী নয়, হেয়ারস্টাইল বাছাই করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন চুলের ঘনত্বের দিকেও। সঠিক হেয়ারস্টাইল বাছাই করতে পারলে চুলের যাবতীয় খুঁত আড়াল করা যায়, পাশাপাশি কোনো সমস্যা থাকলে চুল সাজাতে গিয়ে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল হয়। তাই সব দিক ভেবেচিন্তে তারপরেই সঠিক হেয়ারস্টাইলটি বেছে নিন। আসুন নিচে কিছু ফর্মুলা জেনে নেই –

- চুল লম্বা বা মাঝারি এবং ঘন হলে তা বেঁধে রাখার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে হাই বা স্লিক পনিটেল, সাইড বান, আপডু, নানা ধরনের বিনুনি চেষ্টা করতে পারেন। চুল খুলে রাখতে চাইলে হাফ আপডু করা আপনার জন্য ভালো হবে। এছাড়া আপনি চাইলে চুল স্ট্রেট করে ব্যাক ব্রাশ করেও নিতে পারেন।
- চুল ছোট ও ঘন হলে ওয়াটারফল ব্রেড, সামুরাই বান বা হাফ পনিটেল ট্রাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে চুলের টেক্সচার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভালো। হেয়ার সাজ সরঞ্জামও এড়িয়ে চলুন।
- চুল ছোট ও পাতলা হলে হেয়ার পাফ করে নিতে পারেন। ফ্রেঞ্চ বান, সাইড টুইস্টও দেখতে ভালো লাগবে। বিভিন্ন ধরনের হেয়ার সাজ সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারেন। তাতেও চুলের খুঁত অনেকাংশে আড়াল হয়ে যাবে ।
- চুল লম্বা ও পাতলা হলে ফিশটেল বা পাফি ব্রেডের মতো হেয়ারস্টাইল চেষ্টা করতে পারেন। চুল খুলে রাখতে চাইলে চেষ্টা করতে পারেন বিচ ওয়েভস স্টাইলটি । ক্লিক পনিটেল বা বান এই ধরণের পাতলা চুলে এড়িয়ে চলুন।
- কোঁকড়া চুলে নানা ধরনের বেনুনি দেখতে ভালো লাগে। তবে চাইলে ফ্রেঞ্চ ব্রেড বা সামুরাই বেনুনি চেষ্টা করতে পারেন।
- কপাল চওড়া বা উঁচু হলে হেয়ার পাফ বা ব্যাকব্রাশ না করাই ভালো। এতে আপনার কপাল আরো বড় দেখাবে।
সাজগোজের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে যখন আপনি আপনার চুলে বিভিন্ন হেয়ার স্টাইল করতে যাবেন তখন আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যেন বেশি আঁটসাঁট ভাবে চুল না বাধা হয়। এতে আপনার চুলের ক্ষতি হতে পারে। তাই সাবধানতার সাথে উপরোক্ত হেয়ার স্টাইলগুলা করুন। আশা করি আপনি আপনার চুলে উপরিউক্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী হেয়ার স্টাইল করে আপনার সাজগোজ আরো আকর্ষণীয় করতে পারবেন।