বর্তমানে আমাদের দেশে চুল পড়ার সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কমবেশি সকলেরই চুল পরে যাচ্ছে। এটি ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। অনেকেই আবার চুল পড়া বন্ধ করতে নানা প্রসাধনী ব্যবহার করেন। অনেকে বিভিন্ন ওষুধও খান। তবে তাতে বিশেষ কোনো লাভ হয় না। সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারে বদল এনে দেখতে পারেন।আসুন জেনে নেই চুল পড়া কমাতে কোন খাবারগুলো বেশি করে খেতে পারেন।
চুল পড়া কমে যেসব খাবারে
যে যে খাবার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে আপনার চুল পড়ে কমে যাবে তা নিচে বর্ণনা করা হলো।
পানি
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। পানি শরীরের ডিহাইড্রেশন ভাব থেকে মুক্ত করে। ডিহাইড্রেশন হলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এবং অনেক চুল পরে যায়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি খেলে এর ঘাটতি পূরণ হয়। যার ফলে চুল পড়া কমে যায়। তাই খাবার তালিকায় পানি সকলের জন্যই অত্যান্ত জরুরি একটি খাবার ।
গরুর মাংস
এটি একটি সুষম খাদ্য যাতে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি থাকে। গরুর মাংস বা এর মতো লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এই আয়রন লাল রক্ত কোষ থেকে আপনার শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে যা আপনার চুলের ফলিকল সহ স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধি করে। এছাড়াও আয়রন চুলের ফলিকল গঠন এবং কার্যকারিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাদাম
বাদামে প্রচুর পরিমানে আয়রন, জিংক, ভিটামিন এবং প্রোটিন রয়েছে। এইসব উপাদান চুলের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত এই বাদাম খেলে মাথার ত্বক মসৃণ হয় এবং সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাদাম চুলের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

মটরশুটি
মটরশুঁটিতে রয়েছে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ও আয়রন। আয়রনের ঘাটতির কারণে চুল পড়া সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক কাপ মটরশুঁটিতে প্রায় ৮ মি.গ্রা আয়রন থাকে। চুল পড়া সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিবেলার খাদ্য তালিকায় এক কাপ পরিমাণ যে কোনো মটরশুঁটি রাখতে পারেন।
ওটস
ওটসে জিঙ্ক, ভিটামিন এবং প্রোটিন রয়েছে।জিঙ্ক এর অভাবে চুল পড়তে পারে। তাই দিনের শুরুতেই এক বাটি ওটামিল খেতে পারেন। এটি চুলে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। যা চুলকানি ও রুক্ষতার সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে থাকে।
ডিম
প্রোটিন এর অভাব চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ডিম রাখার চেষ্টা করুন। তাছাড়াও চুলকে শক্তিশালী ও মজবুত করতে সপ্তাহে কমপক্ষে দুইদিন কন্ডিশনার হিসেবে ডিম এর প্যাক ব্যবহার করুন।
স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরিতে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড আর ভিটামিন বি-এর পুষ্টি। যা চুল পড়া বন্ধ করতে অব্যর্থ খাবার হিসেবে সাহায্য করে। এটি চুলের অ্যালোপেশিয়া প্রতিরোধ করে চুলের গোড়া মজবুত করতে পারে।তাই খাবার তালিকায় স্ট্রবেরি রাখা উচিত।
মসুর ডাল
আয়রন ও প্রেটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো মসুর ডাল। এটি খাবার তালিকায় রাখুন। এটি আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্যে বেশ উপকারী।
গাজর
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। ভিটামিন এ চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে। মাথার তালুতে পুষ্টি জোগায় ও মাথার ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে দারুণ কার্যকরী। এছাড়াও গাজর চুলে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে ভিটামিন-এ রয়েছে। এ ছাড়া এই মিষ্টি আলু বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। যা চুলের ঘনত্ব এবং সিরাম উৎপাদন করে আপনার চুলকে সুস্থ এবং প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে। তাই খাবার তালিকায় মিষ্টি আলু অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
আমলকী
চুলের জন্য উপকারী উপাদান হিসেবে আমরা আমলকীর কথা সবাই জানি। আমলকীর রসে থাকা নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড চুলে শক্তি জোগায়। চুল পড়া রোধ করে। বাজারে আমলকী দিয়ে তৈরি নানা ধরনের তেল পাওয়া যায়। সেই তেল মাথার তালুতে লাগালে বা এই ফলের রস বানিয়ে খেলেও সেটা একই রকমের উপকার হয়।
শসা
শসার রয়েছে একাধিক উপকারিতা। শসায় সিলিকন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও সালফার পাওয়া যায়। এই প্রতিটা উপাদানই চুলের জন্য ভীষণ জরুরি। তাই শসা খেলে শক্তিশালী চুল পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে চুল দ্রুত লম্বা হবে।
তেলযুক্ত মাছ
তেলযুক্ত বিভিন্ন মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের একটি চমৎকার উৎস। এসব মাছে আরো আছে প্রোটিন, ভিটামিন ডি এবং ওমেগা ৬। যা দেহ ও মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। চুলের ফলিকলের চারপাশের চর্বির আস্তরণকে ভারী করে। যার ফলে চুল মজবুত , ঝলমলে হয় এবং দ্রুত বাড়ে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এসব তেলযুক্ত মাছ যোগ করুন।
লেবুজাতীয় ফল
লেবুজাতীয় সকল ধরণের ফল যেমন : কমলালেবু, মাল্টা, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি ফল ভিটামিন সি’তে ভরপুর থাকে। ভিটামিন সি দেহে আয়রন শোষণে ভূমিকা রাখে। আর আয়রন ও অন্যান্য উপাদান চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে। তাছাড়া ভিটামিন সি দেহে কোলাজেন তৈরি করে যা চুল বাড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত মজবুত রাখে ফলে চুল ভেঙে পড়ে না।

দই বা পনির
দই ও পনিরে আছে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম। যা চুলের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই দই কিংবা পনির রাখুন।
পালং ও অন্যান্য গাঢ় সবুজ শাক
পালং ও অন্যান্য গাঢ় সবুজ শাকে আছে প্রচুর আয়রন ,ফলেট, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। চুলের কোষের জন্য আয়রন একটি প্রয়োজনীয় মিনারেল। আপনার দেহে আয়রনের ঘাটতি হলে অক্সিজেন ও খাবারের পুষ্টি চুলের গোড়া পর্যন্ত ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না। ফলে চুলের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে চুল পড়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। তাই বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত।
আমাদের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের মতো, চুলের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও প্রোটিন এবং বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। তাই প্রতিদিনের পাতে রাখুন এমন কিছু খাবার যা আপনার চুল ঝরা তো কমাবেই, সঙ্গে চুলকে করে তুলবে স্বাস্থ্যকর। আশা করি উপরোক্ত খাবারের তালিকা আপনার সহায়ক হবে।