You are currently viewing ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার উপায় ও কতদিন লাগতে পারে
ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার উপায়

ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার উপায় ও কতদিন লাগতে পারে

সান ট্যান বা সূর্যের প্রভাবের কারণে ত্বকের রঙের পরিবর্তন একটি সাধারণ সমস্যা। গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে ত্বক কালো হয়ে যায়। যা অনেকের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার জন্য কিছু সহজ ও কার্যকরী উপায় প্রচলিত রয়েছে। প্রথমে, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগান। দই ও হলুদ মিশিয়ে একটি প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া, আলুর রস বা শসার পেস্ট ব্যবহার করে মুখে লাগালে ত্বক শীতল হবে এবং ট্যান কমবে। 

নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ইত্যাদি সানট্যান কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করার জন্য এবং সান ট্যান দূর করার জন্য কিছু সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে, যা ঘরে বসেই করা সম্ভব। এই আলোচনাই আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান এবং ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার উপায়

নিচে ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার উপায় বর্ণনা করা হলো। 

লেবু এবং মধু

লেবু ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। মধু ত্বকের ময়শ্চারাইজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। একটি ছোট বাটিতে দুই চা চামচ লেবুর রস এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার করলে সান ট্যান কমাতে সাহায্য করবে।

সান ট্যান

দই এবং হলুদ

দইয়ে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং হলুদ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। একটি বাটিতে দুই চা চামচ দই এবং এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং ট্যান দূর করতে সাহায্য করবে।

বেসন এবং টমেটো

বেসন ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। আর টমেটো ত্বকে শীতলতা এনে দেয়। দুই চা চামচ বেসন এবং একটু টমেটো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি ত্বকে লাগিয়ে ২৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত করলে সান ট্যান কমানোর পাশাপাশি ত্বককে কোমলও করবে।

আলু

আলুর মধ্যে উপস্থিত এনজাইম ত্বককে উজ্জ্বল করতে বিশেষভাবে কার্যকর। এই এনজাইম ত্বকের মৃত কোষগুলোকে দূর করতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষের বৃদ্ধি করে। আলুর রস ত্বকে প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা হয়ে উঠে। 

একটি আলু স্লাইস করে বা আলুর রস করে ত্বকে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। আলু নিয়মিত ব্যবহার করলে সান ট্যান কমানোর পাশাপাশি ত্বককে সুস্থ রাখে। এছাড়া, আলু ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ময়েশ্চারাইজিং গুণও প্রদান করে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখবে। 

শসা

শসা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে, যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। শসার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ত্বকের প্রদাহ এবং রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে। শসা কুচি করে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকে শীতলতা এনে দেয় এবং ব্রণ বা র‍্যাশের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও শসার রস মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং ত্বকের ময়েশ্চার লক করতে সাহায্য করে। নিয়মিত শসা ব্যবহারের ফলে ত্বক সতেজ থাকে এবং এটি ট্যান দূর করবে।

প্যাক তৈরির অন্যান্য উপাদান

সান ট্যান দূর করার জন্য কিছু অন্য উপাদানও ব্যবহার করা যায়:

  • মসুর ডাল: মসুর ডালের পেস্ট ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
  • সুগন্ধি তেল: যেমন নারিকেল তেল বা আখরোটের তেল ত্বকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
  • দুধের প্যাক: দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বককে উজ্জ্বল করে।

সান প্রোটেকশন

সান প্রোটেকশন ত্বকের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে SPF 30 বা তার বেশি সূচকের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে, সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সূর্যের তাপে বের না হওয়াই ভালো। ঢিলা পোশাক, চওড়া হ্যাট বা ক্যাপ ও UV ব্লকিং সানগ্লাস পরিধান করে ত্বকের ক্ষতি কমানো যায়। নিয়মিত সান প্রোটেকশন গ্রহণ করা ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও সুরক্ষিত রাখে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য

স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পুষ্টি ত্বককে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল, কোমল এবং মসৃণ হয়ে ওঠে। ফল ও সবজি, বিশেষ করে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ত্বককে সুস্থ রাখে এবং দীর্ঘদিন সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত পানি পান

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের ৭০% গঠন করে এবং সঠিক হাইড্রেশন নিশ্চিত করে। পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, ফলে ত্বক উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হয়। এছাড়া, এটি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ক্লান্তি ভাব কমে যায়। দৈনিক অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করা উচিৎ। যা শরীরের সব কার্যক্রমকে সচল রাখতে এবং ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে অপরিহার্য।

বিশ্রাম ও ঘুম

বিশ্রাম এবং ঘুম শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিমাণে ঘুম আমাদের শরীরের পুনরুদ্ধার, শক্তি সংগ্রহ এবং মানসিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের সময় শরীর টিস্যু মেরামত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম মেজাজ উন্নত করে এবং স্ট্রেস কমায়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। যা ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করবে।

বাদামী ত্বকের ট্যান

বাদামী ত্বকের ট্যান দূর হতে কতদিন সময় লাগে?

বাদামী ত্বকের ট্যান দূর হতে সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে এটি আপনার ত্বকের প্রকার, যত্নের পদ্ধতি এবং সান ট্যানের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। যদি আপনি নিয়মিত প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেন। যেমন লেবু, দই বা আলু, এবং সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরণ করেন, তাহলে ফলাফল দ্রুত দেখতে পাবেন । 

এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ট্যান কমাতে সাহায্য করে। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন কারণ কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘ সময়ও লাগতে পারে।

ছেলেদের মুখের ট্যান দূর করার উপায়?

ছেলেদের মুখের ট্যান দূর করার জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকরী উপায় আছে। প্রথমে, লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে মুখে লাগান, এটি ২০ মিনিট পর ধোয়ে ফেলুন। দ্বিতীয়ত, দই ও হলুদ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং ৩০ মিনিট পরে ধোয়ে ফেলুন। স্ক্রাবিংয়ের জন্য চিনি এবং নারিকেল তেল মিশিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করে UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করুন। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে। নিয়মিত যত্নে দ্রুত ফল পাবেন।

উপসংহার 

সান ট্যান দূর করা সম্ভব এবং এটি করার জন্য অনেক প্রাকৃতিক ও কার্যকরী উপায় রয়েছে। উপরক্ত আলোচনা থেকে ঘরে বসে সান ট্যান দূর করার উপায় এবং কিছু সহজ পদ্ধতি মেনে চললে ত্বকের সাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব। সঠিক খাদ্য, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এবং প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে আপনি সহজেই সান ট্যান থেকে মুক্তি পেতে পারেন।  

তবে, এটি মনে রাখতে হবে যে ফলাফল পেতে কিছু সময় লাগতে পারে, তাই ধৈর্য্য ধরে নিয়মিত ব্যবহার করুন। ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সঠিক যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।