মানুষের বাহ্যিক রূপের মূল আকর্ষণ হলো তার চুল। যার চুল যত সুন্দর তার শ্রী ততটাই আকর্ষণীয়। তাই তো, চুলকে ভালো রাখার জন্য মানুষ কতকিছুই না ব্যবহার করে থাকে। অনেক খরচ ও করে যাতে তার চুল আকর্ষণীয় ও মজবুত হয়।
কিন্তু যত উপাদানই ব্যবহার করা হোক না কেন, আগে প্রয়োজন চুলকে পরিষ্কার রাখা। চুলকে পরিষ্কার রাখতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পুর প্রচলন রয়েছে। যা ব্যবহারে চুল পরিষ্কার সহ পুষ্টিগুণ সম্পৃক্ত হতে পারে। আসুন এই শ্যাম্পু ব্যবহারের নানা নিয়ম জেনে নেই।
কোন চুলের জন্য কোন শ্যাম্পু ভালো
আমাদের প্রতিদিনের কাজের প্রয়োজনে বাইরে সারাদিন অনেক ছুটোছুটি করতে হয়। রোদ, বৃষ্টি, ধুলাবালি ,পলিউশন ইত্যাদির কবলে পরে যাই। যার ফলে আমাদের ত্বকের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব পরে এর অবনতি ঘটতে থাকে। তাই প্রয়োজন হয় নিয়মিত যত্ন নেয়া, তবে আমরা যদি জানতে পারি কোন চুলে কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে তাহলে আমরা তার সমাধান পেতে পারি খুব সহজেই।
শুষ্ক চুল
শুষ্ক চুলের জন্য দরকার ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু। এতে চুল নরম ও ঝরঝরে হয়।
তৈলাক্ত চুল
তৈলাক্ত চুলে ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করে লাভ নেই। এ ধরনের চুলের জন্য ব্যবহার করতে হবে কিটোকোনাজোল, জিংক, পাইরিথিওন উপকরণ আছে এমন ধরনের শ্যাম্পু।
খুশকিযুক্ত চুল
খুশকি শুধু শুষ্ক স্ক্যাল্পের সমস্যা নয়। অনেক ক্ষেত্রে তৈলাক্ত চুলেও খুশকির প্রবণতা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে শ্যাম্পু নির্বাচন করা উচিত ভেবেচিন্তে। খুশকির কারণ কী, তা জেনে তবেই ভালোমানের অ্যান্টিডেনড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
কোঁকড়ানো চুল
কোঁকড়ানো চুল স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক ও রুক্ষ হয়। এ ধরনের চুলের জন্য প্রয়োজন ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু, যা চুল নরম ও স্বাভাবিক রাখবে।
রিবন্ডিং চুল
যাদের চুল রিবন্ডিং করা ও সফট, তাদের জন্য প্রয়োজন ভলিউমাইজিং শ্যাম্পু। এ ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের ঘনত্ব বাড়ে এবং চুল ভালো থাকে।
কালার চুল
কালার চুলের জন্য এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে, যা চুলের রং ঠিক রাখতে সাহায্য করে। চুলের ধরন কেমন এটাও জানতে হবে। কালার চুলের জন্য আলাদা ধরনের শ্যাম্পু আছে।
রুক্ষ চুলের জন্য কোন শ্যাম্পু ভালো?
সব ধরনের চুলের জন্য একই শ্যাম্পু চলে না। চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পুও বদল করতে হয়। তাই একেক চুলের জন্য একেকটা শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। আসুন জেনে নেই রুক্ষ চুলের জন্য উপকারী ও ভালো মানের শ্যাম্পু ব্যবহার।

- যদি চুল রুক্ষ হয় এবং ভেঙ্গে যায় তবে এটি খুব রুক্ষ এবং ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। এবং যদি চুল প্রসারিত হয় এবং না ভেঙ্গে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি উচ্চ প্রোটিন শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- আপনি আপনার বর্তমান শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করা চালিয়ে যেতে চান তবে যেকোনো একটা ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ একটার ভিতরে আরেকটা ব্যবহার করা যাবেনা।
- একটি সিরামাইড ভিত্তিক বা CMC ভিত্তিক চিকিৎসা করুন। এগুলো রুক্ষ চুলকে মেরামত করবে এবং কিউটিকল সিল করে ভিতরের কাঠামো পূরণ করবে। এগুলি হল 2 ফেজ ট্রিটমেন্ট, প্রথমটি ফিল এবং রিপেয়ার এর মধ্যে, দ্বিতীয়টি হলো সিল।
- রুক্ষতার মতো ক্ষতি হলে তীব্রতার উপর নির্ভর করে ফ্রিকোয়েন্সি সপ্তাহে দুবার থেকে পাক্ষিক হতে পারে। এবং মাসে একবার ফলো-আপ করুন যাতে চুলের অবস্থা আরও ভালো হয়।
- রুক্ষ ভঙ্গুর চুলের আরেকটি কারণ যা ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি তৈরি করে। এগুলির চিকিৎসা হতে পারে অত্যধিক প্রোটিন, কেরাটিন বা সিলিকন ভিত্তিক শ্যাম্পু।
- অত্যধিক বিল্ড আপ, চুলের শ্যাফটে আর্দ্রতা প্রাপ্তি থেকে চুলকে বন্ধ করে দেয় এবং ভিতরের জন্য আর্দ্রতা টেনে নিয়ে যায়, যা চুলকে শুষ্ক ও ভঙ্গুর করে তোলে। তাহলে আপনি এই ক্ষেত্রে, একটি হালকা ডিপ ক্লিনজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। আপনার সূক্ষ্ম চুল থাকলে এটি হয়। দাগ দূর করতে আপনার নিয়মিত, সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক পরিষ্কার করা উচিত।
শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল দিলে কি হয়?
শ্যাম্পু করার কয়েক ঘণ্টা আগে চুলে তেল মালিশ করা বেশ পুরোনো একটা রীতি। তবে এভাবে তেল মাখা কি আসলেই ভালো? আসুন জেনে নেই।
তেল মাখা নিয়ে যদি বেশি বাড়াবাড়ি রকমের সমস্যা না সৃষ্টি হয়,সেক্ষেত্রে শ্যাম্পু করার আগে তেল মাখা অবশ্যই ভালো। তবে, তেল মেখে অনেকে সারারাত রেখে দেন, এটা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শ্যাম্পু করার আগে তেল মাখার বেশকিছু উপকারিতা রয়েছে। চলুন, নিচে জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে-
মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
চুলের গোড়া ভালো রাখার মূলে রয়েছে মাথার ত্বক। মাথায় রক্ত সঞ্চালন ভালো হলে চুল পুষ্টি পাবে সঠিকভাবে। মাথায় ত্বকে কোনো সংক্রমণ হলে, সেটিও তেল রুখে দিতে পারে।
চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখা
যাদের মাথার চুল এবং ত্বক শুষ্ক, তারা শ্যাম্পু করার কয়েক ঘণ্টা আগে মাথায় তেল মেখে রাখলে উপকার পাবেন। তেল সবসময় চুলের ওপর সুরক্ষার আস্তরণ তৈরি করে। যার ফলে শ্যাম্পু করার পরও চুল রুক্ষ হয়ে যায় না।
মাথার চুল ছিঁড়ে যাওয়া রোধ করে
শ্যাম্পু করার পর চুল ধুতে গিয়ে অনেকের চুল ছিঁড়ে যায়, চুলের গোড়া আলগা হয়ে গেলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই শ্যাম্পু করার আগে তেল মাখলে চুল ঝরে পড়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
চুলের রুক্ষভাব দূর করে
তেল চুলের কিউটিকল গুলোকে নরম রাখতে সাহায্য করে রুক্ষভাব দূর করে দেয়। রাসায়নিক উপাদান নির্ভর কন্ডিশনার, সিরাম ব্যবহার না করতে না চাইলে তেল মাখা যেতেই পারে।
সপ্তাহে কয়বার শ্যাম্পু করা দরকার?
চুল কত দিন পর পর ধোবেন সেটা নির্ভর করে চুলের ধরনের উপরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুলে জমে থাকা ময়লা, চুলের গোড়ায় জমে থাকা অতিরিক্ত তেল দূর করতে শ্যাম্পু ব্যবহার করা জরুরি।
তবে প্রতিদিন বা অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের কারণে আবার চুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ প্রতিদিন চুল ধুলে চুলের গোড়ায় থাকা প্রাকৃতিক তেল শুকিয়ে যায় যার ফলে চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। জেনে নিন প্রয়োজনীয় টিপস।
- চুল কত দিন পর পর ধোবেন সেটা নির্ভর করে আপনার চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ার উপরেও। অনেকের চুল প্রতিদিন ধুলে রুক্ষ হয়ে যায়, অনেকের আবার তিন দিন শ্যাম্পু না করলে রুক্ষ হয়।
- যাদের চুল সিল্কি বা স্ট্রেইট তারা একদিন পর পর ধুয়ে নেবেন চুল। কারণ এ ধরনের চুল খুব দ্রুত তৈলাক্ত হয়ে যায়। ফলে একদিনের বেশি পানি না লাগালে চুপসে যায়।
- যদি প্রতিদিন বাইরে বের হতে হয় এবং রোদ, ধুলাবালি ও ঘামের সংস্পর্শে চুল আসে, তবে দুই দিনে অবশ্যই একবার ধুয়ে নেবেন চুল।
- যাদের চুল কোঁকড়ানো তারা সপ্তাহে একবার অথবা দুইবার ধুলেই যথেষ্ট।
- চুল স্টাইলিং করতে গিয়ে স্প্রে বা জেল ব্যবহার করলেও শ্যাম্পু প্রয়োজন।
- ওয়েভি বা ঢেউ খেলানো চুল দুই থেকে তিনবার ধুয়ে নিন প্রতি সপ্তাহে।
- যাদের চুল সহজে রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায় তারা সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু ব্যবহারের আগে অবশ্যই তেল গরম করে ম্যাসাজ করবেন চুলে।
- ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহার যদি করতেই হয়, তবে শ্যাম্পুর সঙ্গে খানিকটা পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিন।
শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্ন
শ্যাম্পু করার পরে যদি ঠিকমতো চুলের যত্ন না নেওয়া হয়, তা হলে নিয়ম মেনে তেল-শ্যাম্পু-কন্ডিশনার মাখা সত্ত্বেও চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শ্যাম্পু করার পরে চুলে প্রচুর আর্দ্রতা থাকে বলে চুল ভঙ্গুর আর নরম থাকে, সামান্য টান পড়লেই তা ভেঙে ঝরে যায়। তাই জেনে নিন, শ্যাম্পু করার পরে কীভাবে আপনার চুলের যত্ন নেবেন!

চুল বেঁধে রাখবেন না
ভেজা চুল অনেক বেশি ভঙ্গুর হয়, তাই শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুল বাঁধলে চুল উঠে যাওয়া খুব স্বাভাবিক! ভেজা চুল বাঁধলে মাথা তো চুলকোয়ই, খুশকিও হতে পারে। তাই বাঁধার আগে সবসময়ই চুল শুকোনো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
আঙুল দিয়ে চুলের জট ছাড়ান
ভেজা চুলে প্রথমেই চিরুনি লাগাবেন না। আঙুল চালিয়ে চালিয়ে ধীরে ধীরে চুলের সব জট ছাড়িয়ে নিন। জট ছাড়ানোর সময় চুল খুব বেশি টানাটানি করবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আপনার চুলে জট ছাড়ান।
চিরুনি ব্যবহার পরিহার করুন
ভেজা চুলে চিরুনি চালানো একেবারে চলবে না। চুল আধ শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, তারপর মোটা দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে আঁচড়ে নিন।
বাদ দিন ব্লো হেয়ারড্রায়ার
হিট স্টাইলিং চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব খারাপ। মাঝেমধ্যে অনুষ্ঠান বা বিয়েবাড়ি উপলক্ষ্যে হিট স্টাইলিং চলতে পারে, কিন্তু তা অভ্যেস করে নেবেন না! শ্যাম্পু করার পর চুল ব্লো ড্রাই করলে চুলের সমস্ত আর্দ্রভাব উড়ে গিয়ে চুল শুকনো আর ভঙ্গুর হয়ে যায়।
আশা করি এখন সঠিকভাবে নিজের চুলের যত্ন নিতে পারবেন এবং চুলে পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করে সৌন্দর্য ধরে রাখতে আপনার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।