কথায় বলে প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। আসলেও তাই। যেমন ধরুন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এমতাবস্থায় একটা মানুষের সাথে আপনার হয়ত কথা হতেও পারে না পারে। তবে এখানে যে বিষয়টি তা হলো মানব মস্তিষ্ক কাউকে দেখেই কিছু একটা ভেবে নিতে একটু দেরি করে না। তাই যদি নিজের সম্বন্ধে একটা ইতিবাচক প্রভাব আমরা রাখতেই চাই তাহলে অবশ্যই বেশভূষা শালীন রাখতে হবে অবশ্যই।
এখানে অনেকেই শালীন আর আকর্ষণীয়র মাঝে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। তাদের বলছি শালীনতা এবং অন্যকে আকর্ষণ করার জন্য কিছু করা এক বিষয় নয়। যাই হোক, বেশভূষার সাথেই যে বিষয়গুলো চলে আসে তা হলো আমাদের ত্বক। এমন না যে আমি আপনাকে পাউডার মেখে রাস্তায় হেঁটে বেড়াতে বলব।
বরং একটা সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক আপনাকে সুস্থ থাকতেও সহযোগিতা করবে। তাই বেশভূষার পাশাপাশি ত্বকের বিষয়ও প্রণিধানযোগ্য। আর ত্বকের ব্যাপারটি আসে বিশেষ করে আপনার বিবাহিত জীবনের ক্ষেত্রে। হাজার হোক আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে উদ্ভট অবস্থায় দেখতে চাইবেন না। তেমনি সেও না। তাই ব্যক্তিগত হাইজিনের এই বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। যাই হোক, আজকে মূলত আমরা ত্বক সাদা করার ঔষধ কোনটি? তা ব্যবহার করা উচিত হবে কি না। সে সম্বন্ধে আলোচনা করব। জানতে হলে সাথেই থাকুন।
ত্বক ফর্সা করতে চান নাকি স্বাস্থ্যকর ত্বক চান?
অনেকেরই ইচ্ছা থাকে একটা জেল্লাদার ত্বক থাকুক। অনেকেরই তো স্বপ্ন পশ্চিমাদের মতো ফর্সা একটা ত্বক। আর এর ফলেই বুঝা যায় আমরা কতটা শিকলাবদ্ধ। পশ্চিমারা আমাদের মগজ মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করছে। সাদা চামড়াই যেন সৌন্দর্যের প্রতীক। যাই হোক, এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করতে চাই আসলে আপনার সাদা চামড়া দরকার না একটা সুস্থ ত্বক দরকার।
আপনাকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিই আচ্ছা, ফর্সা মানেই কি সৌন্দর্য? মোটেও না। যদি তা হয়ই তাহলে পশ্চিমাদের চেয়ে বেশি সুন্দর হচ্ছে কৃত্রিমভাবে আটা ময়দা মেখে বেড়ানো মানুষ, তাই নয় কি? সৃষ্টিকর্তার প্রতিটি সৃষ্টি তার আপন বৈশিষ্ট্য ও গুণে সুন্দর। যেমন কালো হওয়ার পরও হাবশী গোলাম বেলাল(রাঃ) ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ)’র প্রিয়।
তাই একটা ফর্সা ত্বক নয় বরং আপনার প্রকৃতিগতভাবেই যে রং হতে পারে পারিবারিকভাবে কিংবা জাতিগতভাবে তা নিয়ে কখনোই বিমর্ষ হওয়ার কিছুই নেই। আর ফর্সা হওয়া কোনো মানদণ্ড নয়। তাই আমাদের দরকার একটা পরিষ্কার ও সুস্থ ত্বক। কেননা ত্বকের একটু এদিক ওদিক হওয়ার কারণে স্কিন ক্যান্সার কিন্তু মুখিয়ে আছে আপনাকে আক্রমণের জন্য।
ত্বক সম্বন্ধে কিছু প্রাথমিক কথা
ত্বকের যত্নের পূর্বেই অর্থাৎ আপনি যে এই সাদা থেকে সুস্থ ত্বকের দিকে নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে আরও কিছু বিষয়। যেমনঃ

ত্বকের টেক্সটার, লেয়ার বা টাইপ সম্বন্ধে। আমাদের ত্বক মূলত তিনটি লেয়ারের সাহায্যে গঠিত এপিডার্মিস, ডার্মিস ও হাইপো ডার্মিস। আর ত্বকের সুস্থতায় প্রতিটি জিনিস অনেক গুরত্বপূর্ণ। তাই ভুলভাল ঔষধ ব্যবহারে ত্বকের যে কোন ক্ষতি হলে তা পুষিয়ে নিতে কিন্তু অনেক কাঠখড় পোড়ানো লাগতে পারে। যাই হোক এবার চলুন জেনে নেয়া যাক সাদা নয় বরং সুস্থ ত্বক কীভাবে গড়ে তুলবেন।
ত্বকের যত্নে করণীয়
আমাদের আলোচনার এ পর্যায়ে আপনি হয়তো ত্বকের সুস্থ থাকার গুরুত্ব বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন। এ পর্যায়ে আমরা তাই একটু খুঁতিয়ে দেখতে চাই কীভাবে আসলে ত্বকের যত্ন নিয়ে ত্বক সুস্থ রাখা যায়। আর আমরা যেমনটা বলেছি বিশ্বের অন্যতম বিশ্বস্ত উৎস থেকে তথ্য সংগৃহীত।
যত্ন নিয়ে পরিষ্কার রাখুন ত্বককে
ত্বক মূলত ছাইরঙা হয়ে যেতে পারে যদি তা ময়েশ্চারাইজেশন হারিয়ে ফেলে। আর ময়েশ্চারাইজেশন হারিয়ে ফেলা মানে কি জানেন? তা মানে মূলত হলো ত্বক থেকে পানি বের হয়ে যাওয়া। আর এরই ফলে আপনার ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ। না আমার কথা না। Forensic Science-এ B.Sc.করা একজন গবেষকের মতামত এটি।
তাই এক্ষেত্রে যে কোন ময়েশ্চারাইজার হতে পারে একটা সমাধান আপনার ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্কতা দূরীকরণে। আর আমরা বিশ্বাস করি প্রাকৃতিক জিনিসের তুলনায় আর তেমন কিছুই ততটা ফলদায়ক আসলে হতে পারেনা। ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে এমনি কিছু প্রাকৃতিক উপাদান হলোঃ
- চা পাতা
- ভিটামিন ই
এগুলো মূলত ভিটামিন এবং মিনারেল সম্বলিত।
তৈলাক্ত ত্বকে কি তাহলে ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই?
উপরিউক্ত আলোচনার পর আপনার মনে হতেই পারে যদি আপনি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী হোন। তা হলো আমার সম্ভবত ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই। কিন্তু তা একটি ভুল ধারণা। আচ্ছা আপনি যে প্রতিনিয়তই বাইরে যাচ্ছেন কাজের জন্য কিংবা যে কোন উদ্দেশ্যেই। এতে করে আপনার ত্বকে কি চাপ বাড়ছে না? অবশ্যই বাড়ছে। যেমন দূষণের শিকার হচ্ছে, ইউভি এক্সপোজারের শিকার হচ্ছে ইত্যাদি এখন এর পরেও যত্ন ছাড়া তা ঠিক থাকবে কি? মোটেও না। আশা করি করণীয় বুঝতে পেরেছেন।
ময়েশ্চারাইজারই কি সব ঠিক করে দিবে?
প্রথমে একটি কথা বলেছিলাম। এবার আরেকটা প্রবাদ বাক্য আনছি বাইরে ঠিকঠাক ভিতরে সদরঘাট। দর্শনধারী যদিও একটা ইম্প্রেশন তৈরি করে কিন্তু এর পর যদি তা টিকিয়ে না রাখতে পারেন তবে কিন্তু ভেজাল। একইভাবে ময়েশ্চারাইজরের পাশাপাশি আপনার দরকার অভ্যন্তরীণ হিলারও। অর্থাৎ যা আপনার ত্বককে ভিতর থেকে করে তুলবে সুন্দর। আর এর জন্য সার্বজনীন যিনি আছেন তাকেই পান করতে হবে। জি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কেননা এর ফলে আপনার কোষগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি জমা হয় ফলে ত্বক মসৃণ থাকে।

ত্বক সাদা করা নয় বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করুন
ত্বক ফর্সা করার আগে আপনার যা জরুরি তা হলো বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করা। কেননা সাদা চামড়ায় বার্ধ্যকের চেয়ে আপনার এ ত্বক আছে তাতে যৌবন অনেক বেশি জরুরি। আর এই বুড়িয়ে যাওয়া রোধের জন্য আমাদের জানতে হবে আসলে তাতে সাহায্য করে কি। কোলাজেন এবং ইলাস্টিন। এই দুই মহাশয় হলেন প্রোটিন গোত্রীয়। যৌবনকে ধরে রাখতে মূলত তারাই সাহায্য করে থাকেন। কোলাজেন কমে গেলে কি হয় জানেন? দুটো বিষয় সাধারণত ঘটে
- এক হলো আপনার ত্বক ডাল(dull) হয়ে যায়
- দুই হলো আপনার ত্বক কুঁচকে যায়
আর এদের ফলেই মূলত বার্ধক্য যেকে বসে। আর এক্ষেত্রে আপনি যা ব্যবহার করতে পারেন তা হলো ভিটামিন সি, রেটিনল কিংবা সানস্ক্রিন। এগুলো মূলত সাইন্টিফিকভাবে পরীক্ষিত। তবে বলে রাখা ভালো শুধুমাত্র আপনার ক্রিম আপনাকে একটা ভালো স্কিন পেতে সাহায্য করবে না। বা কুঁচকে যাওয়া রোধ করবে না।
বরং এক্ষেত্রে আপনাকে একটা ভালো ডায়েট প্ল্যান করতে হবে। আর এতে আপনার ত্বক সুস্থ থাকবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো ফলমূল কিংবা শাকসবজি যা মূলত ত্বককে সুস্থ রাখে, পাশাপাশি মাল্টিভিটামিন।
উপসংহার
পরিশেষে কিছু বিষয় পরিষ্কার করে নেয়া বড্ড জরুরি। উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা মূলত ত্বককে সাদা নয় বরং কীভাবে সুন্দর করা যায় সে সম্বন্ধে কথা বলেছি। কেননা সাময়িকের জন্য ত্বককে ফর্সা করার চেয়ে একটি সুস্থ ত্বক অনেক বেশী জরুরি। আর মানুষ তো তার আপন বৈশিষ্ট্যেই সর্বোত্তম।
তাই ত্বক সাদা করার ঔষধের দিকে না গিয়ে আমরা সুস্থ ত্বকের বিষয়টির প্রতি প্রাধান্য দিয়েছি। আর সচরাচর বাংলা ব্লগে শুধু আশপাশ থেকে তথ্য নিয়ে আমাদের লেখা নয় বরং জার্নাল থেকে নেয়া, বিভিন্ন লেখকের তথ্যে সাজানো হয়েছে। পরবর্তী পোস্টের জন্য সাথেই থাকুন।