You are currently viewing সানস্ক্রিন ও সান লোশন কি এক ও এটি কি কালো দাগ দূর করে
সানস্ক্রিন ও সান লোশন কি এক

সানস্ক্রিন ও সান লোশন কি এক ও এটি কি কালো দাগ দূর করে

সানস্ক্রিন ও সান লোশন, এ দুটি উপাদানই আমাদের ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। অনেকেই মনে করেন যে সানস্ক্রিন এবং সান লোশন একই জিনিস, কিন্তু আসলে তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং ত্বকের ক্ষতি, যেমন পিগমেন্টেশন ও প্রিমেচিউর এজিং, ত্বকের ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। 

এর মধ্যে ইউভি (UV) ফিল্টার থাকে যা সূর্যের রশ্মি ব্লক করে। অন্যদিকে, সান লোশন মূলত ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয় এবং এতে সাধারণত পুষ্টি উপাদান থাকে। এই আলোচনায় আমরা সানস্ক্রিন এবং সান লোশন কী এক? তাদের মধ্যে পার্থক্য, সানব্লক কী, প্রাইমার এর সুবিধা এবং এর সঠিক ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্লেষণ করব।

সানস্ক্রিন ও সান লোশন কি এক

নিচে সানস্ক্রিন ও সান লোশন কি এক না আলাদা সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

সানস্ক্রিন ও সান লোশন

সানস্ক্রিন

সানস্ক্রিন মূলত ত্বককে ইউভি (UV) রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। সূর্যের আলোতে ইউভি রশ্মির উপস্থিতি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যা বিভিন্ন ত্বকের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পিগমেন্টেশন, প্রিমেচিউর এজিং বা বার্ধক্য, এবং ত্বকের ক্যান্সার। সানস্ক্রিন বিশেষভাবে তৈরি করা হয় ইউভি রশ্মির প্রভাব কমানোর জন্য।

সানস্ক্রিনে প্রধান দুটি  ইউভি ফিল্টার

  • ফিজিক্যাল (মিনারেল) ফিল্টার: যা ত্বকের উপর একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে এবং সূর্যের ইউভি রশ্মির প্রতিফলন ঘটায়। সানস্ক্রিনে সাধারণত জিংক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড থাকে এই ধরনের ফিল্টার হিসেবে।
  • কেমিক্যাল ফিল্টার: কেমিক্যাল ফিল্টার সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত একটি উপাদান যা সূর্যের ইউভি রশ্মি শোষণ করে ত্বককে রক্ষা করে। কেমিক্যাল ফিল্টারগুলির মধ্যে অক্সিবেনজোন, অস্কিলিসোন এবং অ্যাভোবেঞ্জোন অন্তর্ভুক্ত। এই উপাদানগুলি কার্যকরভাবে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

সানস্ক্রিনের সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (SPF) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। SPF মানে ত্বককে কতক্ষণ সূর্যের রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা যাবে। সাধারণভাবে, SPF ৩০ থেকে ৫০ এর মধ্যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়, যা প্রায় ৯৭% থেকে ৯৮% ইউভি রশ্মির প্রভাব কমাতে পারে।

সান লোশন

সান লোশন সাধারণত ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখতে ব্যবহৃত হয় এবং এতে বেশীর ভাগ পুষ্টিকর উপাদান থাকে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করার পরিবর্তে, ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহের জন্য তৈরি করা হয়। সান লোশন বিভিন্ন ধরনের তেল, ভিটামিন এবং হিউমেকট্যান্টস (যেমন গ্লিসারিন) দ্বারা সমৃদ্ধ থাকে যা ত্বককে হাইড্রেট করে।

তবে, সান লোশন সাধারণত সানস্ক্রিনের মতো সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে সরাসরি সুরক্ষা প্রদান করে না। কিন্তু কিছু সান লোশনে সানস্ক্রিন উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যা একসঙ্গে সানস্ক্রিনের সাথে ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে।

মৌলিক পার্থক্য

  • উদ্দেশ্য: সানস্ক্রিন মূলত সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, অন্যদিকে সান লোশন ত্বকের আর্দ্রতা ও পুষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • উপাদান: সানস্ক্রিনে ইউভি ফিল্টার থাকে, যা ইউভি রশ্মির প্রভাব কমায়। সান লোশনে সাধারণত পুষ্টি উপাদান, তেল ও হিউমেকট্যান্টস থাকে যা ত্বককে নরম ও মসৃণ করে।
  • ব্যবহার: সানস্ক্রিন সাধারণত সূর্যের আলোর সরাসরি সংস্পর্শে আসার আগে ব্যবহার করতে হয়। সান লোশন সাধারণত ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য দৈনন্দিন ব্যবহার করা হয়।

সানব্লক ও সানস্ক্রিনের মধ্যে পার্থক্য কি?

সানব্লক এবং সানস্ক্রিন উভয়ই ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, তবে তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা তাদের কার্যকারিতা এবং ব্যবহারিক দিকগুলি আলাদা করে।

সানব্লক এবং সানস্ক্রিনের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হল তাদের সুরক্ষার প্রক্রিয়া। সানস্ক্রিনে কেমিক্যাল ফিল্টার ব্যবহার করে যা UV রশ্মিকে শোষণ করে। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনে সাধারণত অক্সিবেনজোন, অবোবেনজোন বা অ্যান্টিলোক্সিটান নামক উপাদান থাকে। এগুলো UV রশ্মি শোষণ করে এবং প্রতিরোধ করে। তবে অনেকের ত্বক এই উপাদানগুলির প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। অন্যদিকে, সানব্লক যেমন জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড ত্বকে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা প্রদান করে।

কোন সানস্ক্রিন ত্বক কালো করে না এবং ব্যবহারের নিয়ম

সানস্ক্রিন সাধারণত UV-A এবং UV-B রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতে তৈরি করা হয়। UV-A রশ্মি ত্বকের গভীরে প্রবাহিত হয় এবং বয়সের লক্ষণ বৃদ্ধির করে। এছাড়াও রিঙ্কল বা ডার্ক স্পট সৃষ্টি করে। UV-B রশ্মি ত্বকের বাইরের স্তরে প্রভাব ফেলে, যা সানবার্ন এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। সানস্ক্রিন সাধারণত SPF (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) দ্বারা চিহ্নিত হয়, যা UV-B রশ্মি থেকে সুরক্ষার মাত্রা নির্দেশ করে। SPF সংখ্যা যত বেশি হবে, ত্বক তত বেশি সুরক্ষিত থাকবে।

সানব্লক মূলত সূর্যের UV রশ্মি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় এবং ফিজিক্যাল বা মিনারেল ভিত্তিক প্রোডাক্ট হয়। সানব্লক প্রাকৃতিক উপাদান যেমন টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড বা জিঙ্ক অক্সাইড ব্যবহার করে সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করে এবং ত্বকের ওপর একটি শিল্ড বা স্তর তৈরি করে। এই ধরনের সানব্লক সাধারণত ত্বককে আরও কার্যকরভাবে সুরক্ষা দেয় এবং সেনসিটিভ ত্বকের জন্য উপযুক্ত হতে পারে কারণ এটি কম সক্রিয় হয়ে থাকে।

উপযুক্ত সানব্লক বা সানস্ক্রিন বেছে নেওয়ার জন্য ত্বকের ধরন, প্রয়োজনীয়তা এবং সূর্যের এক্সপোজারের পরিমাণ সম্পর্কে বিবেচনা করা উচিত। ত্বকের সেনসিটিভিটি, পরিবেশের প্রভাব এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী সঠিক পণ্য নির্বাচন করা উচিত। সানস্ক্রিন সাধারণত দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য বেশি উপযুক্ত, কারণ এটি দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় এবং সহজে ব্যাবহার করা যায়। 

সানস্ক্রিন আগে নাকি প্রাইমার?

সানস্ক্রিন আগে নাকি প্রাইমার

প্রথমে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা হয় এবং তারপরে প্রাইমার ব্যবহার করা হয়। যদি প্রাইমার আগে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সানস্ক্রিন ত্বকে পুরোপুরি শোষিত হবে না, যা ত্বককে সঠিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে পাড়বে না। সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখবে এবং প্রাইমার মেকআপের জন্য একটি মসৃণ বেস তৈরি করবে। সানস্ক্রিন ও প্রাইমার একত্রে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। 

সানস্ক্রিন

মেকআপ রুটিনে সানস্ক্রিন এবং প্রাইমার ব্যবহারের সঠিক প্রক্রিয়া জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সানস্ক্রিন সাধারণত প্রাইমারের আগে ব্যবহার করা উচিত। এর কারণ হলো সানস্ক্রিনের প্রধান কাজ হলো ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করা। সানস্ক্রিন ত্বকে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে যা ইউভি রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এটি ত্বকে লাগানর পর, ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করা উচিত। এতে এটি সম্পূর্ণভাবে শোষিত হয় এবং সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে।

প্রাইমার 

প্রাইমার মূলত মেকআপের জন্য একটি মসৃণ ভিত্তি তৈরি করে। এটি ত্বকের ত্রুটি, ফাইন লাইন এবং পোরস হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং মেকআপের স্থায়িত্ব বাড়ায়। প্রাইমার সানস্ক্রিনের উপরে প্রয়োগ করা উচিত, কারণ এটি সানস্ক্রিনের সুরক্ষা স্তরের উপর একটি সমান ভিত্তি তৈরি করতে সহায়ক। 

সানস্ক্রিন কি কালো দাগ দূর করে?

সানস্ক্রিন কালো দাগ বা পিগমেন্টেশন সরাসরি দূর করে না, তবে এটি পিগমেন্টেশন কমাতে এবং নতুন কালো দাগের সৃষ্টি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালো দাগ সাধারণত সূর্যের অতিরিক্ত এক্সপোজার, বয়সজনিত পরিবর্তন, অথবা হরমোনাল অস্থিরতার কারণে ঘটে। সূর্যের ইউভি রশ্মি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে, যা কালো দাগের সৃষ্টি করে।

সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি ইউভি এ (UVA) এবং ইউভি বি (UVB) রশ্মি ব্লক করে, যা ত্বকের পিগমেন্টেশন বৃদ্ধি করতে পারে। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বককে অতিরিক্ত এক্সপোজার থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। সাধারণভাবে, SPF ৩০ বা তার বেশি সহ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত, যা প্রায় ৯৭% থেকে ৯৮% ইউভি রশ্মির প্রভাব কমাতে সক্ষম। 

তবে, সানস্ক্রিনের সাথে অন্যান্য পিগমেন্টেশন কমানোর চিকিৎসা যেমন ভিটামিন সি সিরাম, হাইড্রোকুইনন, বা কেমিক্যাল পিলস নেওয়া উচিত। এগুলো সরাসরি ত্বকের কালো দাগের চিকিৎসায় সাহায্য করে। সানস্ক্রিন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া একসাথে ব্যবহার করলে, ত্বকের রঙের অমসৃণতা কমে।

উপসংহার

সানস্ক্রিন ও সান লোশন কি এক? সানস্ক্রিন ও সান লোশন দুটিই ত্বকের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে তাদের উদ্দেশ্য এবং উপাদান ভিন্ন। সানস্ক্রিন সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, যা ত্বককে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে সান লোশন ত্বকের আর্দ্রতা এবং পুষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়। তাদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে ত্বকের সুস্থতা ও স্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব। তাই, সঠিক পণ্য নির্বাচন এবং তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে ত্বকের যত্নে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

Leave a Reply