You are currently viewing চুলের যত্নে ভিটামিন: কোন ভিটামিন চুলের জন্য সবচেয়ে উপকারী?
চুলের যত্নে ভিটামিন

চুলের যত্নে ভিটামিন: কোন ভিটামিন চুলের জন্য সবচেয়ে উপকারী?

বর্তমানে চুল পড়া আমাদের জন্য খুব সাধারণ একটা সমস্যা। আমাদের চারপাশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে চুল পড়া সমস্যা যেন বেড়েই চলছে। চুল পড়লেই সেটা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার যেন কোনো অন্ত থাকে না। তবে কিছু কিছু সময় চুল পড়া স্বাভাবিক আবার কিছু কিছু সময় অস্বাভাবিক। 

আসুন জেনে নেই কীভাবে আমরা চুল পড়া বন্ধ করতে পারি এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস যা গ্রহণ করে আমরা চুল পড়ার মতো বিরাট সমস্যা মোকাবিলা করতে পারব। 

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি চুল গজায় ?

ভিটামিন-ই ক্যাপসুল এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুন আছে। এটি  ফ্রি-ব়্যাডিকালসের বিরুদ্ধে লড়াই করে চুলকে বৃদ্ধি করতে পারে। সেই সঙ্গে কোষের দেখভাল করতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। যার কারণে বিভিন্ন বিউটি কোম্পানি তাদের বিভিন্ন উপাদানে ভিটামিন-ই ব্যবহার করে থাকেন। 

হেলথলাইন এর তথ্য মতে, প্রায় ১৯৫০ সাল থেকে ডার্মাটোলজিতে ভিটামিন ই ব্যবহার হয়ে আসছে। ফ্যাটে দ্রবীভূত এই অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুল ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । 

চুল পড়া কমায়

চুল পরা কমাতে এই ভিটামিন অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। যাদের চুল পরা সমস্যা অনেক বেশি তারা নির্দ্বিধায় ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন বা খেতে ও পারেন, তবে খাওয়ার তুলনায় এটি চুলে ব্যবহার বেশি উপকারী হয়। জেনে অবাক হবেন যে, ২০১০ সালে একটি ছোট ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়েছিল। কয়েকজনের উপর ভিটামিন -ই  প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর পরপরই যাঁদের চুল পড়ার সমস্যা ছিল, তাঁদের সেই সমস্যা কমতে শুরু করে এবং চুলের বৃদ্ধিও হয় দেখার মতো।

নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে

ভিটামিন-ই এর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট গুণ স্ক্যাল্পের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে খুব দ্রুত নতুন চুল গজায়।

স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়

স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে ভিটামিন-ই। ফলে চুলের বৃদ্ধি ঘটে এবং চুলকে আকর্ষণীয় করে দেখার মতোই।

চুল পড়া বন্ধের জন্য কী ঔষধ খাওয়া যায়?

চুল পরার মতো মহা সমস্যায় যারা ভুক্তভোগী তারা জানেন এটার সমাধানের জন্য তাদের কতকিছু করতে হচ্ছে, বিভিন্ন উপাদান ব্যবহারের পাশাপাশি চুলের যত্ন নিতে অনেকেই ঔষধ সেবন করতে চাচ্ছেন। চুল পড়া প্রতিরোধের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে।

চুলের যত্নে ভিটামিন
  • মিনোক্সিডিল বা রোগেইন এর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। চুল পড়া প্রতিরোধ এবং পুনরায় চুল গজানোর জন্য রোগেইন বেশ কার্যকরী ঔষধ। রোগেইন হচ্ছে ফেনা তৈরিকারী এক প্রকারের ঔষধ যা দিনে দুইবার আপনি সরাসরি মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। মাথার পেছন এবং সামনের অংশে চুল গজানোর জন্য এটি বেশ কার্যকরী।
  • আরেকটি কার্যকরী ওষুধ হচ্ছে, ফিনাস্টেরাইড বা প্রপেশিয়া যা মুখে খাওয়ার উপযোগী এবং আপনি প্রতিদিন তা গ্রহণ করতে পারেন। যথাযথ ফলাফল পাওয়ার জন্য উভয় ঔষধ আপনাকে প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে। 

এই দুটি ঔষধ অনেকসময় পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোন ভিটামিন চুল গজাতে সাহায্য করে ?

আমাদের চুলের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এর প্রয়োজন রয়েছে। আসুন জেনে নেই কিছু উপকারী ভিটামিন যা আমাদের চুল গজাতে সাহায্য করবে।

ভিটামিন A

ভিটামিন-A ত্বকের জন্য খুবই ভালো, একথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু ভিটামিন-A এর মধ্যে থাকা রেটিনল চুলকেও ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকে সেবাম নামক উপকারী উপাদান যা চুলকে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

ভিটামিন C

শরীরের জন্য যেমন ভিটামিন সি খুবই ভালো, তেমনই চুলের জন্যেও অনেক উপকারী। ভিটামিন সি চুলের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন আসে ভিটামিন সি থেকে। এটি চুল পড়া কমায় এবং নতুন কোলাজেন তৈরি করে ।

ভিটামিন D

ভিটামিন ডি হাড়ের গঠনের জন্য খুবই জরুরি একটি উপাদান। ঠিক তেমনই চুলের গঠন, নতুন চুল গজানো এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে ভিটামিন ডি সাহায্য করে থাকে ।

ভিটামিন E

ভিটামিন-ই প্রাকৃতিক ভাবে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে থাকে। রক্ত সঞ্চালনের কাজও বজায় রাখে ভিটামিন-ই। ভিটামিন-ই চুল বাড়তে সাহায্য করে, চুলের স্কাল্প ভালো রাখে।

কি খেলে চুল পড়া বন্ধ হবে?

আমরা চুলের যত্ন নিতে নানা রকমের পণ্য উপাদান ব্যবহার করে থাকি। এতে আমাদের চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। আবার অনেকসময় তার উল্টোটা হয়ে চুল পড়তে থাকে। চুল পড়া বন্ধ করতে আবার মরিয়া হয়ে উঠি কীভাবে কি ব্যবহার করলে এর থেকে মুক্তি মিলবে। 

কিন্তু আমরা কি জানি? চুলে পণ্য ব্যবহার এর পাশাপাশি আমাদের খাবার খাওয়ার প্রতি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এবার জেনে নেয়া যাক কি কি খাবার খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলানো যাবে-  

হাঁস-মুরগির মাংস

এসব মাংস প্রোটিনের উত্তম উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে চুলের স্বাস্থ্য উপযোগী উপাদান যেমন জিংক, আয়রন এবং ভিটামিন-বি।

পালং শাক

পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ফোলাইট। এই সবুজ শাকটি নিয়মিত খেলে আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিন-এর মাত্রা বাড়ে এবং এতে চুলের ফলিকল-এ অক্সিজেন পৌঁছায়। এতে করে আমাদের চুল দ্রুত বাড়ে এবং মাথার ত্বক ঠিক থাকে।

গাজর

গাজরেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ যা চুলের পক্ষে উপকারী। নিত্যদিনের ডায়েটে গাজর রাখলে চুল পড়ার সমস্যায় লাগাম দেয়া যায়।

পাকা টমেটো

টমেটোতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা আপনার মাথার স্ক্যাল্প-এর রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিবে। এর কারণে চুলের ফলিকল স্টিমুলেটেড হয়। 

আমলকী

চুলের যত্নে আমলকীর গুঁড়া ব্যবহার করার পাশাপাশি লবণ দিয়ে চার থেকে পাঁচটি আমলকী চিবিয়ে খেলেও চুল পড়া অনেকাংশে রোধ হবে। আমলকীতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা নতুন চুল গজাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি চুল পড়া রোধ করে এবং চুল ঘনও হয়।

শসা

শসাতে আছে নির্দিষ্ট পরিমাণে সিলিকা, সালফার এবং ভিটামিন-এ। এই উপাদান চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। কাঁচা শসার জুস অনেক স্বাস্থ্যকর ও ঠান্ডা। এটি চুল গজাতে সাহায্য করে।

ক্যাপসিকাম

লাল, হলুদ এবং সবুজ ক্যাপসিকাম ভিটামিন-সি এর খুব ভালো উৎস। ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুলের ভঙ্গুরতা দূর করতে সাহায্য করে। 

বাদাম

বাদামে বায়োটিন উপাদান আছে যা চুল দ্রুত বৃদ্ধি করে চুলের গোড়া মজবুত করে থাকে। কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম- এসবে বেশি পরিমাণে বায়োটিন আছে। 

চুল পড়া বন্ধ করা তেলের নাম 

বর্তমান সময়ে প্রত্যেকের ই চুল পড়া বন্ধ করা যেন এক বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। বাজারে তার জন্য নিত্যনতুন বিভিন্ন পণ্য উপাদান ক্রমাগত বের হচ্ছে। এবং এসবের ব্যবহার ও দিন দিন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চুল পড়া বন্ধ করতে বিভিন্ন তেলের প্রচলন লক্ষ্য করা যায় নিচে তার কিছুটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

চুলের যত্নে ভিটামিন

নারকেল তেল

চুলে তেল ব্যবহার করতে নারকেল তেল ব্যবহার করা অনেক জরুরি কেননা,নারকেল তেলে রয়েছে লরিক অ্যাসিড যা চুলের খাদে প্রবেশ করতে পারে, চুলকে মজবুত করে এবং প্রোটিনের ক্ষতি কমায়। এটি চুলের উজ্জ্বলতা যোগ করে এবং কন্ডিশনার প্রদানে সাহায্য করে।

বাদাম তেল

বাদাম তেলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ। এটি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। যা চুল ও মাথার ত্বককে পুষ্টি যোগায়। এটি চুলকে ভাঙ্গা রোধ করে এবং চুলে আর্দ্রতা জোগায়।

নিম তেল

নিম অ্যান্টিফাঙ্গাল ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য এর জন্য অনেক পরিচিত। নিমের তেল মাথার ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে চুল পরার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। নিমের তেল মাথার খুশকি কমাতে সাহায্য করে ত্বককে প্রশমিত করে।

অলিভ অয়েল

অলিভ ওয়েলে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ গুণ রয়েছে। এটি চুলকে গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজার করে। মাথার ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং চুল ভাঙ্গা রোধ করতে সাহায্য করে। এটি চুলে উজ্জ্বলতা ও কোমলতা প্রদানে সাহায্য করে। 

আশা করি চুল পরা বন্ধ করতে উপরিউক্ত তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসবে।

Leave a Reply