You are currently viewing সিস্টিক ব্রণ কেন হয় এবং সিস্টিক ব্রণ খারাপ হওয়ার কারণ কি?
সিস্টিক ব্রণ কেন হয়

সিস্টিক ব্রণ কেন হয় এবং সিস্টিক ব্রণ খারাপ হওয়ার কারণ কি?

ব্রণ আমাদের ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সিস্টিক ব্রণ অনেক বেশি জটিল এবং যন্ত্রণাদায়ক। এটি সাধারণত ত্বকের গভীরে আঘাত করে এবং বড় আকারে ফুলে ওঠে। তবে আপনি কি জানেন, সিস্টিক ব্রণ কেন হয়? সিস্টিক ব্রণের মূল কারণ হল ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া, যা সাধারণ ব্রণের থেকে অনেক বেশি ব্যথাযুক্ত এবং চিকিৎসার জন্য বেশি সময় প্রয়োজন হয়। ত্বকে সেবাম গ্রন্থি যখন অতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন করে এবং তা মৃত কোষের সাথে মিশে যায়, তখন সিস্টিক ব্রণের উদ্ভব ঘটে। 

এর সাথে যুক্ত হতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিশেষত এন্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাব, যা সাধারণত কিশোর-কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা সৃষ্টি করে। আজকের আর্টিকেলে থেকে আমরা সিস্টিক ব্রণ কেন হয় এবং এটি খারাপ হবার কারণসহ হরমনের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

সিস্টিক ব্রণ কেন হয়?

সিস্টিক ব্রণ হবার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে কিছু কারণ আছে যেগুলো সবার জন্যই সাধারণত প্রযোজ্য। চলুন জেনে নিই সিস্টিক ব্রণ হবার কিছু সাধারণ কারণ সম্পর্কে-

সিস্টিক ব্রণ

হরমোনাল পরিবর্তন

হরমোনাল পরিবর্তন সিস্টিক ব্রণের অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) বা গর্ভধারণের সময় শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ত্বকের সেবাম গ্রন্থিগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। অতিরিক্ত সেবাম ত্বকের রন্ধ্রগুলোতে আটকে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সৃষ্টি হয়, যা সিস্টিক ব্রণের উদ্ভব ঘটায়। নারীদের মাসিক চক্রের সময়ও হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ব্রণ হতে পারে। হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা ত্বকের ভেতরে গভীরভাবে ইনফ্লেমেশন এবং সিস্টিক ব্রণের সৃষ্টি করে।

অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন

সেবাম একটি প্রাকৃতিক তেল যা ত্বককে আর্দ্র রাখে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে সেবাম গ্রন্থি অত্যধিক সেবাম উৎপন্ন করে, যা ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ করে দেয়। ত্বকের পোরগুলোর ভেতরে তেল, মৃত কোষ এবং ময়লা জমা হয়, যা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে ইনফেকশন তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় রন্ধ্রে চাপ বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে গভীরতর প্রদাহ এবং সিস্টিক ব্রণ তৈরি হয়। অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন প্রায়শই হরমোনাল পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, বা জিনগত কারণে হয়ে থাকে। এটি ত্বকের গভীরে ফোঁড়ার মতো বড় ব্রণ সৃষ্টি করে, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে ত্বকে দাগ তৈরি করতে পারে।

বায়োসিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়া

সিস্টিক ব্রণ উৎপাদনে Propionibacterium acnes নামক ব্যাকটেরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ব্যাকটেরিয়া ত্বকের সেবামের সঙ্গে মিশে সংক্রমণ তৈরি করে, যা রন্ধ্রগুলোতে আটকে যায় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে ত্বকের ভেতরে ফোলা এবং লালচে রঙের সিস্টিক ব্রণ তৈরি হয়। সাধারণত, ত্বকে কিছু ব্যাকটেরিয়া সবসময়ই থাকে, কিন্তু যখন সেবাম এবং ময়লা জমা হয়, তখন এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ তৈরি করে, যা সিস্টিক ব্রণ তৈরি করে। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণ ব্রণকেও তীব্র সিস্টিক ব্রণে পরিণত করতে পারে।

জিনগত কারণ

জিনগত প্রভাবও সিস্টিক ব্রণের অন্যতম কারণ। পরিবারে যদি কারও সিস্টিক ব্রণের ইতিহাস থাকে, তবে পরবর্তী প্রজন্মেও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জিনগত কারণের জন্য ত্বকের সেবাম গ্রন্থিগুলো অতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন করে এবং রন্ধ্রগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া সহজে সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং সিস্টিক ব্রণ তৈরি হয়। জিনগতভাবে ত্বকের প্রকৃতি এবং সেবামের মাত্রা নির্ধারিত হয়, যা সিস্টিক ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে। যারা জিনগতভাবে সিস্টিক ব্রণের ঝুঁকিতে থাকে, তাদের জন্য নিয়মিত ত্বকের যত্ন ও চিকিৎসা অপরিহার্য।

স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ

স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ সিস্টিক ব্রণকে বাড়িয়ে দিতে পারে। যখন মানসিক চাপ বাড়ে, তখন শরীর কর্টিসল নামে একটি হরমোন উৎপন্ন করে, যা ত্বকের সেবাম উৎপাদন বাড়ায়। এর ফলে ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ত্বকের প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে এবং সিস্টিক ব্রণের মাত্রা বৃদ্ধি করে। স্ট্রেসের ফলে ত্বকের স্বাভাবিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, যা ব্রণগুলোকে আরও গুরুতর করে তোলে। নিয়মিত মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা এবং মেডিটেশন করলে সিস্টিক ব্রণ কমে যেতে পারে।

সিস্টিক ব্রণ হলে কিভাবে বুঝবেন?

সিস্টিক ব্রণ সাধারণ ব্রণের তুলনায় অনেক গভীর এবং তীব্র হয়। এটি ত্বকের নিচে বড়, ফোলা এবং ব্যথাযুক্ত ফোঁড়ার মতো দেখায়, যা সাধারণত ত্বকের পৃষ্ঠে ময়লা বা পুঁজের আকারে প্রকাশ পায় না। স্পর্শ করলে বেশ ব্যথা হয় এবং এগুলো ত্বকের গভীরে শক্ত বা নরম ফোঁড়ার মতো অনুভূত হতে পারে। সিস্টিক ব্রণ সাধারণত লালচে বা ফোলাভাবযুক্ত হয় এবং মুখ, পিঠ, বুক বা কাঁধে বেশি দেখা যায়। 

এর সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো এগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় এবং ত্বকের নিচে আটকে থাকে, ফলে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে। এ ধরনের ব্রণ সময়মতো চিকিৎসা না করলে ত্বকে স্থায়ী দাগ বা ক্ষত তৈরি করতে পারে এবং ত্বকের সাধারণ স্বাস্থ্য নষ্ট করে দিতে পারে। সিস্টিক ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন, কারণ এটি সাধারণ ওষুধে সহজে সারে না।

সিস্টিক ব্রণ খারাপ হওয়ার কারণ কি?

সিস্টিক ব্রণ খারাপ হওয়ার কারণ

সিস্টিক ব্রণ খারাপ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা বা চিকিৎসায় দেরি করা। সিস্টিক ব্রণ সাধারণ ব্রণের চেয়ে অনেক গভীর এবং তীব্র, তাই এটি সাধারণ ব্রণ নিরাময়ের উপায়ে সহজে সারে না। অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে একে হালকাভাবে নেওয়া হয়, কিংবা শুধুমাত্র ত্বকের পৃষ্ঠে প্রদর্শিত লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। 

তবে, সিস্টিক ব্রণ ত্বকের নিচের গভীর স্তরে ছড়িয়ে থাকে এবং প্রায়শই প্রদাহ ও সংক্রমণ বাড়িয়ে তুলতে থাকে। যখন সঠিক চিকিৎসা না করা হয়, তখন ব্রণের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায় এবং ত্বকের নিচে আরও বড় আকারে ব্রণ বা ফোঁড়া তৈরি হয়। এছাড়াও, সময়মতো কার্যকরী চিকিৎসা না হলে এটি ত্বকে স্থায়ী দাগ বা স্কার সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে। এই ধরনের ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোনাল থেরাপি প্রয়োজন।

অনেকেই সিস্টিক ব্রণ হলে সেটা চাপা বা খোঁচানোর চেষ্টা করেন, যা এর অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। সিস্টিক ব্রণ ত্বকের গভীরে থাকে এবং পৃষ্ঠের ময়লা বা পুঁজ সহজে বের হয় না, তাই এটিকে চাপা বা খোঁচানোর ফলে ত্বকের গভীর স্তরে আরও প্রদাহ তৈরি হয়। এর ফলে ব্রণের সংক্রমণ তীব্র হয় এবং সংক্রমণ ত্বকের অন্য স্থানে ছড়িয়ে যেতে পারে। 

এছাড়া, ব্রণ খোঁচানোর ফলে ত্বকে অতিরিক্ত ক্ষতি হয়, যার ফলে ত্বকের নিজস্ব পুনরুদ্ধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে ব্রণের চারপাশে লালচে দাগ, গভীর স্কার বা কালচে দাগ তৈরি হয়। সঠিক পদ্ধতি ছাড়া ব্রণ নিয়ে নাড়াচাড়া করা মানে ত্বকের স্বাস্থ্যকে আরও ঝুঁকিতে ফেলা, যা দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের সৌন্দর্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই সিস্টিক ব্রণ হলে কখনোই নিজে থেকে চাপা বা খোঁচানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।

কোন হরমোনের কারণে সিস্টিক চিন ব্রণ হয়?

সিস্টিক ব্রণ সাধারণত এন্ড্রোজেন হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে হয়। এন্ড্রোজেন পুরুষ ও নারী উভয়ের শরীরে থাকে, তবে বয়ঃসন্ধিকালে বা হরমোনাল পরিবর্তনের সময় এটির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এন্ড্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ত্বকের সেবাম গ্রন্থি অতিরিক্ত তেল বা সেবাম উৎপন্ন করতে শুরু করে, যা ত্বকের রন্ধ্রগুলো বন্ধ করে দেয়। 

এর ফলে রন্ধ্রে আটকে থাকা সেবাম এবং মৃত ত্বক কোষগুলোতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, যা সিস্টিক ব্রণের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), গর্ভধারণ, বা মাসিক চক্রের সময় হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে এন্ড্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ত্বকের তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে সিস্টিক ব্রণের কারণ হতে পারে।

উপসংহার

আমরা জানলাম সিস্টিক ব্রণ কেন হয় এবং এটি আমাদের ত্বকের জন্য কেন এত খারাপ। সিস্টিক ব্রণ একটি জটিল ত্বকের সমস্যা, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং স্থায়ী ক্ষত তৈরি করতে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা এবং অতিরিক্ত সেবামের কারণে এর প্রবণতা বাড়ে, তাই সঠিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা গ্রহণ এবং সঠিক ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ত্বকের এই সমস্যাটি থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনীয় ধৈর্য এবং সচেতনতার মাধ্যমে সুস্থ, উজ্জ্বল ত্বক অর্জন সম্ভব।