You are currently viewing পিগমেন্টেশন কেন হয়- দাগহীণ ও উজ্বল ত্বকের টিপস 
পিগমেন্টেশন কেন হয়

পিগমেন্টেশন কেন হয়- দাগহীণ ও উজ্বল ত্বকের টিপস 

সুন্দর দাগহীন জেল্লাদার ত্বক কে না চায়। তবে আপনার সৌন্দর্যের একটি বিরাট অংশ নষ্ট করে থাকে ত্বকের পিগমেন্টেশন। পিগমেন্টেশন কে সহজ ভাবে বলা হয় ত্বকের  বিবর্ণতা। সূর্যের ক্ষতিকর  রশ্মির প্রভাব, অ্যালার্জি কিংবা হরমোনাল বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক সময় আমাদের ত্বকে পিগমেন্টেশন  দেখা যায়।

পিগমেন্টেশন আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা  নষ্ট করে এবং ত্বকে খুব সহজেই  বয়সের ছাপ ফেলতে সাহায্য করে। তাই সৌন্দর্য  সচেতন হিসেবে আমাদের সকলের  পিগমেন্টেশন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা উচিত। আজকের এই  আর্টিকেলে আমরা জানবো ত্বকে পিগমেন্টেশন হওয়ার কারণ  এবং  ত্বককে পিগমেন্টেশন  এর হাত থেকে রক্ষা করার উপায় সম্পর্কে। 

পিগমেন্টেশন মানে কি?

পিগমেন্টেশন মানে হলো ত্বকের বিবর্ণতা  আপনার ত্বকের বর্ণ যখন স্বাভাবিক থেকে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হয়ে ডার্ক হতে শুরু  করে , তখন এই অবস্থাকে বলা হয় পিগমেন্টেশন । অনেক সময় দেখবেন আপনার দাগহীণ উজ্জ্বল ত্বকের জেল্লা কমে যেতে শুরু করেছে এবং ত্বকের কালার টাও কেমন কালচে দেখাচ্ছে। এটি হলো পিগমেন্টেশন এর প্রধান লক্ষণ।

পিগমেন্টেশন কেন হয় 

আমাদের ত্বকের কালার বা  বর্ণ এর কারণ হলো আমাদের ত্বকে উপস্থিত মেলানিন প্রভাব।  মেলানিনের পরিমাণের  উপরেই আমাদের ত্বকের কালার নির্ভর করে। ত্বকে মেলানিনের  পরিমাণ  কম হয়ে থাকলে ত্বকের রং ফর্সা দেখায়। তবে কোনো কারণে যখন ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ  টা বৃদ্ধি পায় তখন ত্বকে পিগমেন্টেশন এর সমস্যা দেখা যায়। চলুন ত্বকে পিগমেন্টেশন হওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ  জেনে নেওয়া যাক-

সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি

সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি

দৈন্দন্দিন জীবনে আমাদের ত্বকের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়ে থাকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাবে। সূর্যের আলো তে রয়েছে UVA এবং UVB রশ্নি। এটি আমাদের ত্বকের সংস্পর্শে এসে ত্বকে মেলানিনের পরিমাণের  তারতম্য বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ত্বকে কালচে ভাব দেখা যায়। 

অ্যালার্জি

অ্যালার্জি এর  কারণেও  ত্বকে পিগমেন্টেশন হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ত্বকে প্রদাহ এর কারণেও পিগমেন্টেশন দেখা যায়।

 জেনেটিক্যাল বা বংশগত কারণ

বংশগত ভাবেও পিগমেন্টেশন হতে পারে। তাই আপনার বংশে কারও পিগমেন্টেশন থেকে থাকলে আপনার সচেতন হওয়া উচিত।  

হরমোনের তারতম্য এর কারণে 

আমাদের শরীরে অন্যতম প্রয়োজনীয় হরমোন হলো ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন।  শরীরে এই হরমোনের  তারতম্য দেখা দিলে স্কিনে পিগমেন্টেশন হওয়ার প্রবল সম্ভাবন থাকে। 

ত্বকের ক্ষত 

ত্বকের ক্ষত থেকেও পিগমেন্টেশন হতে পারে। বিশেষ করে  মুখে অ্যালার্জি  কিংবা ব্রণ  হলে সেই দাগগুলো  যেকোনো সময়  পিগমেন্টেশনে পরিণত  হয়। এমনকি ত্বকের বাহিরের যেকোনো ক্ষত  যেমন ত্বকে কেটে যাওয়া, ত্বকে পুড়ে যাবার কারণেও ত্বকে পিগমেন্টেশন  হতে পারে।

নিম্নমানের কসমেটিক্স ব্যবহার

শুনতে কিছুটা অবাক মনে হলেও নিম্নমানের কসমেটিকস ব্যবহারের কারণে আপনার হাইপারপিগমেন্টেশন বা মেছতার সমস্যা হতে পারে। আমরা অনেকেই না বুঝে কম দামি কসমেটিকস ও মেকআপ ব্যবহার করে  থাকি। আবার অনেকেই ক্ষতিকর নাইট ক্রিম ব্যবহার করে থাকি । এগুলো আমাদের ত্বক কে ড্যামেজ করে ফেলে। 

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পিগমেন্টেশন এর ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে কেমোথেরাপি এবং হাই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করার ফলে অনেক সময় ত্বকে পিগমেন্টেশনের সৃষ্টি হতে পারে। 

পিগমেন্টেশন কত প্রকার 

ত্বকে কালো বা হালকা দাগই হলো পিগমেন্টেশন। তবে এই পিগমেন্টেশন এর কিছু প্রকারভেদ আছে।

হাইপার-পিগমেন্টেশন (Hyper pigmentation)

সূর্যের রশ্নি আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কারণে এতে রয়েছে শক্তিশালী UVA এবং UVB রশ্নি। সাধারণত সূর্যের এই রশ্মির প্রভাবে এবং হরমোন জনিত কারণে আমাদের ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এতে ত্বকের কালার পরিবর্তন হয়ে কালো হতে শুরু করে। ত্বকের এই অবস্থাকে বলা হয় হাইপার পিগমেন্টেশন। হাইপার পিগমেন্টেশন এর কারণে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। 

হাইপোপিগমেন্টেশন (Hypopigmentation)

ত্বকে মেলানিন হ্রাসের কারণে অনেক সময় ত্বকের কিছু কিছু স্থানের বর্ণ হালকা হতে শুরু করে। দেখা যায় পুরো মুখের কিছু কিছু স্থানে ত্বকের এই হালকা বর্ণ ভাব দেখা যায়। এটিকে বলা হয় হাইপোপিগমেন্টেশন।  

অ্যালবিনিজম (Albinism)

জেনেটিক প্রবণতার কারণে অ্যালবিনিজম হয়ে থাকে। এই সমস্যার কারণে  আমাদের শরীরে  পর্যাপ্ত মেলানিন উৎপাদন হয় না। এতে করে একজন ব্যক্তি একেবারে সাদা বা হালকা ত্বক ও চুলের অধিকারী হয়ে থাকে। 

ফ্রেকলেস ( Fracles)

ত্বকে অতিরিক্ত তিলের সমস্যাকে  বলা হয় ফ্রেকলেস। ফ্রেকলেস এর কারণে মুখে ছোট ছোট অসংখ্য তিল দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো হালকা বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় কালো বর্ণের তিল ও হয়ে থাকে।  

পোস্ট- ইনফ্ল্যামেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন (PIH) 

ত্বকে যেকোনো প্রদাহ কিংবা আঘাতের জন্য বিশেষ করে পোড়া দাগ, ও ব্রণের দাগের কারণে  এই পিগমেন্টেশন এর সমস্যা হয়ে থাকে। 

ভিতিলিগো ( Vitiligo)

ভিতিলিগো কে বাংলাতে বলা হয় শ্বেতি রোগী।  এটি ও ত্বকের একটি বিবর্ণ জনিত রোগ।

মেছতা ( melesma)

সাধারণত মেয়েদের ত্বকে এই মেছতার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। নাক বা গালের দুই পাশে এই মেছতা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। 

পিগমেন্টেশন কমিয়ে দাগহীন ও উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার টিপস

পিগমেন্টেশন কমিয়ে দাগহীন ও উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার টিপস

ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমাদের পিগমেন্টেশন হয়ে থাকে। তবে সঠিক খাদ্যাভাস ও ত্বকের যত্নের মাধ্যমে আপনি এই পিগমেন্টেশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন।  চলুন জেনে নেওয়া যাক দাগহীন ও পিগমেন্টেশন মুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার রহস্য! 

সানস্ক্রিন ক্রিমের  ব্যবহার

আপনি যদি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে চান তাহলে সানস্ক্রিনের বিকল্প নেই। আমাদের ত্বক ড্যামেজ  হওয়ার প্রধান কারণ হলো সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি। তাই ত্বককে এই ক্ষতিকর রশ্নি থেকে বাঁচানোর জন্য  অবশ্যই আপনাকে ভালো মানের SPF যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।  বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনায় রেখে SPF 50+++ যুক্ত সানস্ক্রিন টা বেস্ট। তবে আপনি বাসায় থাকলে এবং সেখানে সূর্যরশ্মি  কম প্রবেশ করলে SPF 30 যুক্ত সানস্ক্রিন ও ব্যবহার করতে পারবেন। 

ক্লিনজার 

সুন্দর ও দাগমুক্ত ত্বক পেতে চাইলে ক্লিনজিং টা অবশ্যই আপনাকে মেনে চলতে হবে। ত্বক পরিষ্কার না থাকলে ত্বকের লোমকুপে ময়লা জমে থাকে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রনের সমস্যা, পিগমেন্টেশন , ত্বকে র‍্যাশ  ইত্যাদি হতে পারে। তাই দৈনিক দুইবার ভালোমানের  ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার রাখবেন। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী রা দৈনিক ২-৩ বার ফেসওয়াশ এর ব্যবহার করতে পারবেন।  তবে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক মনে হলে শুধু রাতে অথবা সকালে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। 

ময়েশ্চারাইজার 

ময়েশ্চারাইজার আমাদের ত্বক কে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে এবং এটি ত্বকের উপরিভাগে একটি প্রলেপ তৈরি করে। এই প্রলেপের ফলে ত্বক দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেট থাকে এবং বাহিরের কোনো জীবাণু সহজে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে না। নিয়মিত ত্বকে সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে এটি  ত্বক কে পিগমেন্টেশন  এবং সানবার্ন থেকে রক্ষা করবে। 

ঘরোয়া ফেসপ্যাকের ব্যবহার 

ঘরোয়া কিছু ফেসপ্যাকের  ব্যবহারেও আপনি ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে পারবেন। হাতের কাছেই পাওয়া যায় এমন কিছু উপকরণ দিয়ে  আপনি খুব সহজে  এই ফেসপ্যাক গুলো তৈরি করতে পারবেন।

আলু ও শশার রসের ফেসপ্যাক : আলুর রস ত্বকের কালো দাগ দূর করতে খুব উপকারী। ত্বকে কালো দাগ বা সানবার্ন দেখা দিলে ত্বক ভালো ভাবে পরিষ্কার করে আলু ও  শশার রস লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলে একটু ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।  নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের কালো দাগ অনেক টাই কমে আসবে। 

বেসন ও হলুদ গুড়া : হলুদে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান । এছাড়া ত্বক  উজ্জ্বল রাখতেও  এটি বহুল ব্যবহৃত। অন্যদিকে বেসন ত্বকে কে গভীর থেকে পরিষ্কার রাখে । বেসন ও সামান্য হলুদের গুড়ার সাথে পানি বা মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করবে। 

চন্দনের ফেসপ্যাক :  চন্দন খুব দ্রুত সময়ে ত্বকের কালো দাগ দূর করে সক্ষম। তাই দাগমুক্ত ত্বকের জন্য চন্দনের সাথে গোলাপ জল ও সামান্য মুলতানি মাটি ব্যবহার করতে পারেন। 

এরপর ফেসপ্যাক  গুলো ত্বকের ধরন বুঝে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু উপকরণ গুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক । তাই অল্প কিছুদিন ব্যবহার করেই ফলাফল প্রত্যাশা করাটা বোকামি।  তবে ধৈর্য ধরে ব্যবহার করলে  আপনি অবশ্যই ত্বকের পরিবর্তনটা নিজ চোখেই দেখবেন। 

স্বাস্থ্যকর  খাদ্যাভাস

সুস্থ থাকার পাশাপাশি সুন্দর ত্বক পেতে চাইলে  আপনাকে অবশ্যই সঠিক পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। দৈনিক খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল রাখুন। সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন । অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খেলে ত্বকে  ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই যথাসম্ভব অধিক  তেল ও মশলা যুক্ত  খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

উপসংহার

সুস্থ শরীরের পাশাপাশি সুস্থ ত্বক,  একজন মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্যস্ততম সময়ে আমরা অনেকেই না বুঝে ত্বকের ক্ষতি করে ফেলি।  অথচ একটু সুন্দর ত্বকের অধিকারী কে না হতে চায় বলুন! আশা করছি আজকের এই ব্লগ থেকে আপনার  পিগমেন্টেশন মুক্ত সুন্দর ত্বক পাওয়ার উপকারী টিপস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।